ভূমিকা : খিলাফত আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল খিলাফত প্রতিষ্ঠা এবং অসহযোগ আন্দোলনের প্রবীন লক্ষ্য ছিল স্বরাজ লাভ কিন্তু দুটি আন্দোলনের সাদৃশ্য ছিল দুটিই ব্রিটিশ বিরোধী। তবে নানা কারণে উভয় আন্দোলনই ব্যর্থতায় মুখ থুবড়ে পড়ে।
→ অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থতার কারণ : অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-
১. গান্ধীজির মনোভাব : গান্ধীজি আকস্মিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন থেকে সরে আসলে ব্রিটিশরা অসহযোগ আন্দোলনকে দমন করার সুযোগ পেয়ে যায়। অনেক ভারতীয় নেতা হঠাৎ করে এ আন্দোলন স্থগিত করায় সমালোচনা করেন, তবুও গান্ধীজি সিদ্ধান্ত বদল করেননি। ফলে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয় ।
২. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি : খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য সাম্প্রদায়িক কারণ দায়ী ছিল তেমনি অসহযোগ আন্দোলনের ক্ষেত্রেও সেরকম হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে প্রথম দিকে ঐক্য স্থাপিত হলেও পরবর্তীতে দ্বন্দ্ব এ আন্দোলনকে ব্যর্থতায় পরিণত করে।
৩. ইংরেজদের দমনমূলক নীতি ও নিপীড়ন : ইংরেজ সরকার অসহযোগ আন্দোলনকে দমন করার জন্য কংগ্রেস নেতাদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। যার ফলে এ আন্দোলন নেতাশূন্য হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে আন্দোলনের গতিবেগও কমে যায়।
৪. মালাবারের হত্যাকাণ্ড : অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো মালাবার হত্যাকাণ্ড। ১৯২১ সালে দক্ষিণ ভারতের মালাবারে কয়েকজন ইউরোপীয় ও বহু হিন্দুকে দুর্ধর্ষ বিদ্রোহী মুসলমানগণ হত্যা করেন। গান্ধীজি এ ঘটনার কোড় প্রকাশ করে সামগ্রিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করেন, ফলে এ আন্দোলন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় ।
৫. চৌরিচৌরার হত্যাকাণ্ড : ভারতের উত্তর প্রদেশে গোরক্ষপুরের কাছে চৌরিচৌরার থানাস্থ একদল সহিংস জনতা ১৯২২ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ২১ জন পুলিশ কর্মীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেন। গান্ধীজী আবারও মর্মাহত হয়ে অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করার সিন্ধান্ত নেন। ফলে এ আন্দোলন ব্যর্থতায় দিকে এগিয়ে যায় ধীরে ধীরে ।
উপসংহার : শেষকথায় বলা যায় যে, গান্ধীজী যে উদ্দেশ্য নিয়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেই উদ্দেশ্য হাসিলের বদলে ব্রিটিশ হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে দিনে দিনে সংঘর্ষ বেড়েই চলছিল। তাই গান্ধীজি অনুভব করলেন এ আন্দোলনে জনতা ও পুলিশ মারমুখী হয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করুক সেটা হতে পারে না। সেজন্য তিনি তিনদিন অনশন পালন করেন এবং ভারতীয় জনগণকে সংগ্রাম বন্ধ করার অনুরোধ জানান ও গণ-অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন ।