ভূমিকা : উনিশ শতকে অটোমান শাসনের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে নজদকে কেন্দ্র করে আরব অঞ্চলে একটি স্বাধীন রাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করে সৌদি রাজবংশ। বিশ শতকের শুরুতে বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয়ের ফলে আরব অঞ্চলে সৌদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। সৌদি রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পিছনে ওয়াহাবী মতবাদ ও | ইখওয়ান বাহিনীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াহাবী মতবাদ প্রচার এবং সে আলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য সে সময় একটি বিশেষ বাহিনী প্রয়োজন ছিল। আর সেটি হলো ইখওয়ান বাহিনী । নিম্নে প্রশ্নালোকে আলোচনা করা হলো-
→ ইখওয়ান বাহিনী গঠনের প্রেক্ষাপট : মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব কর্তৃক প্রবর্তিত ওয়াহাবি মতবাদ প্রাথমিককালে নেজদ অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে এ আন্দোলন সমগ্র আরব উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়াহাবি মতবাদের রক্ষক সউদী রাজবংশ যখন তাদের প্রভাব বিস্তার করতে থাকে তখন তারা বাধা ও বিরোধিতার সম্মুখীন হয় এবং সেজন্যই ইখওয়ান বাহিনী গঠিত হয়।
ইখওয়ান বাহিনী প্রতিষ্ঠা : ১৯০২-১৯১২ পর্যন্ত আব্দুল আজিজ ইবনে সউদের পরিবার ও মক্কার শরীফ হোসাইন এবং তুর্কি সুলতানের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিরোধিতার নিরসনে তিনি আল ইখওয়ান বা ব্রাদারহুট নামে একটি বাহিনী গঠন করেন। যেটি ইখওয়ান নামে পরিচিত।
কাজ : ইখওয়ান সৃষ্টির মাধ্যমে শুধু দুর্ধর্ষ আরব বেদুইন গোত্রের বিরোধিতা ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণেই সমর্থ হননি, বরং আরব বেদুইনদের একতাবদ্ধ করে একটি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পান ইবনে সউদ। যা পরবর্তী সত্যিকার অর্থে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে কাজ করতে সমর্থ হয়েছিল এবং সৌদি রাজবংশ প্রতিষ্ঠার ভূমিকা রাখতে পেরেছিল।
মতবাদ ও আদর্শ : এই বাহিনীর মূলত ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং ওয়াহাবী মতবাদের আদর্শে উজ্জীবিত ছিল । আরব উপজাতীয়দের বিরোধিতা বন্ধ করে সকল বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে জাতীয় চেতনাবোধ সৃষ্টিই ছিল এই বাহিনী সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য।
সংগঠন : ইখওয়ান বাহিনীর সদস্যরা সামরিক ছাউনি বা হিজাবে বসবাস করতো। ইবনে সউদ এরকম ২০০টির অধিক হিজবা প্রতিষ্ঠা করেন। এতে প্রায় ১০,০০০ সৈন্য ছিল। এ বাহিনীর সহায়তার ইবনে সউদ নজদ, হাসা, কাতিফ, জুবাইলসহ সমগ্র আরব উপদ্বীপে প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সৌদি রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় যে কয়টি সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এর মধ্যে অন্যতম ছিল ইখওয়ান। ইখওয়ানরা ছিল মূলত ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসী। ওয়াহাবী আন্দোলনের কর্মীদের একটি সশস্ত্র ইউনিট ছিল ইখওয়ান । ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসী হিসেবে ইবনে ইখওয়ানকে ব্যবহার করেন সৌদি আরব তাঁর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। সুতরাং বলা যায় যে, সৌদির রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পিছনে ইখওয়ানের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।