ভূমিকা: ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘটনাটি একটি চমকপ্রদ বিষয়। কারণ | মার্কি আর রাষ্ট্রগুলোর নিম্নলিখিত প্রতিবাদ সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের- চাপে পড়ে জাতিসংঘ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনুমতিদান করে। এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে জন্ম নেয় নতুন এক বিষফোড়া। যার ভয়াবহ প্রভাব আজো মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। নিম্নে প্রশ্নালোকে ইসরাইল রাষ্ট্র বস প্রতিষ্ঠার ঘটনাবলি বর্ণনা করা হলো :
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা : ইহুদিরা মূলত আহলে কিতাব, তারা হযরত মুসা (আ.)-এর অনুসারী তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম তাওরাত কে বা old testment। তাদের রাষ্ট্রভাষা হিব্রু, ইহুদিরা সুপ্রাচীনকাল থেকে সুদের ব্যবসার মাধ্যমে প্রভূত অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে প্রতি যায়। তাদের চক্রবৃদ্ধি হারের সুদের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের বিষ মানুষজন তাদের উপর প্রচণ্ড রকম ক্ষুব্ধ ছিল। ফলে তারা বিশ্বের নানান প্রান্তেই যাযাবর হিসেবে বসবাস করতো এবং সব দেশ থেকেই বিতাড়িত হতে থাকে । তাই ইহুদিরা তাদের ধর্মগ্রন্থানুসারে পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে ফিলিস্তিনে নিজেদের ইহু আবাসভূমি গড়ার লক্ষ্যে ১৯০০ সালের প্রথম দিক থেকে বিভিন্ন জা আলিয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে আসতে থাকে । ইতোমধ্যে স্বা জায়োনিস্টদের আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৭ সালে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাশ করে। ফলে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে ইহুদি ফিলিস্তিনে এসে আবাসন গড়ে তুলতে থাকে। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের ৬০ লক্ষ ইহুদি নিধনের ফলে ভীতসন্ত্রস্ত ইহুদিরা ফিলিস্তিন অভিমুখে দলে দলে যাত্রা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র শক্তি বিজয়ী হলে জায়োনিস্টদের লবিং এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। ব্রিটিশ সরকার প্যালেস্টাইন সংকট নিরসনের জন্য ৩টি শ্বেতপত্র ও ১টি কমিশন গঠন করলেও জায়োনিস্টদের তীব্র বিরোধিতার মুখে তা ভেস্তে যায় । ১৯৪৬ সালে গঠিত অ্যাংলো আমেরিকান কমিটি ইহুদিদের স্বার্থরক্ষার সুপারিশ করলে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আরেক ধাপে উন্নীত হয়। ব্রিটিশ সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য লন্ডনে সম্মেলন আহ্বান করেন। কিন্তু এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করলে এই সম্মেলনটিও ব্যর্থ হয়। বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট শাসন প্রত্যাহার করে তার দায়িত্ব জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর করে। জাতিসংঘ ১৪ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে ফিলিস্তিন। ভূখণ্ডকে আরব রাষ্ট্র, ইহুদি রাষ্ট্র ও জেরুজালেম এই ৩টি ভাগে বিভক্ত করে প্রস্তাব উত্থাপন করে। কিন্তু ফিলিস্তিন বা ইসরাইল | দু'পক্ষই তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে মার্কিন সহায়তায় স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে আরব | জোট ও ইসরাইলের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬টি যুদ্ধ সংগঠিত হয় । কিন্তু আরবদের অনৈক্য, স্বার্থের সংঘাত ও অনুন্নত যুদ্ধ সরঞ্জামের কারণে মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরাইল প্রতিটি যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে টিকে যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪৮ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোর অনৈক্য, স্বার্থের সংঘাত ও দূরদর্শিতার অভাবেই মার্কিন মদদে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে স্বাধীন ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। ইসরাইলের এই প্রতিষ্ঠা আজো বিষফোঁড়া হয়ে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে।