ভূমিকা : উনিশ শতকে রাশিয়ার সমাজ কাঠামো মধ্যযুগীয় ও সামন্ত্রতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হতো। এ সময় রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথা চালু ছিল। যার ফলে সমাজে বিভিন্ন সমস্যা বিরাজমান ছিল। ভূমিদাস প্রথা চালু থাকায় এ সমাজে অনেক পিছিয়ে ছিল। রাজকীয় সম্পত্তির অধিকারীরা ভালো থাকলেও ভূমি ভূমিদাসদের জীবনমান ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। রাশিয়ায় তখন স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। অর্থনীতি ছিল সামন্ত প্রথাভিত্তিক। ভূমিদাসদের উৎপাদনের উপর নির্ভর করে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হতো। উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে সামন্ত প্রথার পতন হলে রাশিয়ায় পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা শুরু হয়।
উনিশ শতকে রাশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা : উনিশ শতকে রাশিয়ায় এক ব্যক্তির শাসন অর্থাৎ স্বৈরতন্ত্র শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। জার বা সম্রাট ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি অভিজাত শ্রেণির পরামর্শকে অত্যধিক গুরুত্ব দিতেন। এক্ষেত্রে জনসাধারণের মতামত প্রদানের কোনো সুযোগ থাকতো না। উনিশ শতকের কিছু সম্রাটের শাসনামলে রাশিয়া বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত হয়। সেসব সম্রাটের মধ্যে ক্যাথারিন, পিটার দ্যা গ্রেট, দ্বিতীয় আলেকজান্ডার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ।
জার তৃতীয় আলেকজান্ডার ও দ্বিতীয় নিকোলাস ছিলেন স্বৈরাচারী নীতির অনুসারী। তারা রাশিয়ায় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যক্তিস্বাধীনতাসহ সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও রোধ করেন। জার তৃতীয় আলেকজান্ডার এক জার, এক গির্জা এবং এক রাশিয়ার আদর্শ ঘোষণা দেন। এ আদর্শ বাস্তবায়নে তিনি রাশিয়ায় উদারতন্ত্র ও গণতন্ত্র বাতিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজনৈতিক দলগুলোর উপর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সর্বত্রই রুশ ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহণে বাধ্য করেন। তিনি তার পিতা দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের হত্যাকারীদের কারাদণ্ড দেন।
জার তৃতীয় আলেকজান্ডার সিংহাসনে বসে Land Captain নামক এক শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করে রাশিয়ায় পুনরায় সামন্ত্রতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। Land Captain কর্মচারীরা জনসাধারণের সাথে নিষ্ঠুর ব্যবহার করতো। এদের হাতে তৃতীয় আলেকজান্ডার প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রদান করেন। তৃতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ সালের ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ অনেক অর্থ আদায় কতো অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে তাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হতো।
→ উনিশ শতকে রাশিয়ায় অর্থনৈতিক অবস্থা : নিম্নে উনিশ শতকের রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা আলোচনা করা হলো : ১. শিল্পের অগ্রগতি সাধন : উনিশ শতকে রাশিয়ায় শিল্প 5 ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন হয়। জার নিকোলাস, দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ও তৃতীয় আলেকজান্ডারসহ প্রত্যেক সম্রাট শিল্পের T/ অগ্রগতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উনিশ শতকে য় রাশিয়ায় ভারি শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। বিশেষ করে লোহা, ন্ন অস্ত্র, রেলপথ এসব শিল্পসমূহ। রাশিয়া কৃষিনির্ভর দেশ থেকে শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়।
২. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ । ব্যবস্থার উন্নতি অপরিহার্য। উনিশ শতকে রাশিয়ায় পরিবহণ ও ত যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়। রাস্তাঘাটের র উন্নয়নসহ জলপথেরও ব্যাপক উন্নয়ন করা হয় । যোগাযোগ ব্যবস্থার শ | সুবিধার্থে উনিশ শতকে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন হয় ।
৩. ভূমিদাস প্রথা বিলোপসাধন : মুক্তি আইনের মাধ্যমে ১৮৬১ সালে ভূমিদাস প্রথা বিলোপ করা হলে রাশিয়া সামত কে সমাজ থেকে পুঁজিবাদী যুগে প্রবেশ করে। ভূমিদাসরা মুক্তিলাভ স্থা করে শহরে এসে কলকারখানায় নিযুক্ত হয়। এ সময় ী। কৃষিক্ষেত্রেও ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে। দেশের সামগ্রিক উৎপাদন কে বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
৪. বৈদেশিক বাণিজ্য ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য : এ সময় কিছু রাশিয়া বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বৈদেশিক বাণিজ্যের সুবিধার্থে রাশিয়া সমুদ্র বন্দর স্থাপন এট করে। ফলে বাণিজ্য আরো সহজতর হয়। রাশিয়া সহজে পশ্চিম ইউরোপের সাথে শস্য ও বিভিন্ন কাঁচামাল রপ্তানি করতে পারে।
৫. শ্রমিকদের দুরবস্থা : এ সময় রাশিয়ার শ্রমিকদের অবস্থা ভূমিদাসদের মতো শোচনীয় শ্রমিকদের ছিল। অভিজাত শ্রেণি দ্বারা তারা নির্যাতিত হতো। তারা নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতো। তারা অমানুষিক পরিশ্রম করলেও সে অনুযায়ী পারিশ্রমিক পেতো না ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ না হওয়ায় তখন অভিজাত শ্রেণি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতো। সে সময় সার্ফ বা ভূমিদাস কিংবা কৃষকদের জীবনযাত্রার মান ছিল অত্যন্ত নিম্ন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯০৫ সালে বিপ্লব এবং ১৯১৭ সালে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয়।