ভূমিকা : জার প্রথম নিকোলাস সাম্রাজ্যবাদী ও ঘোর রক্ষণশীল ছিলেন। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রেও তাঁর এই ছাপ পরিলক্ষিত হয়। বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে তিনি ইউরোপের রক্ষণশীলতার প্রতি সমর্থন, প্যারিসের সন্ধি, গ্রিসের বিদ্রোহসহ নানাবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করেন। জার প্রথম নিকোলাসের পরিচয় : প্রথম নিকোলাস ছিলেন রাশিয়ার জারিনা (Czarina) দ্বিতীয় ক্যাথরিনের পৌত্র, জার প্রথম পলের পুত্র এবং জার প্রথম আলেকজান্ডারের ভ্রাতা। ১৭৯৬ সালের ৬ জুলাই সেন্ট পিটার্সবার্গে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ভ্রাতা প্রথম আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর ১৮২৫ সালে জার প্রথম নিকোলাস রাশিয়ার সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন রক্ষণশীল ও প্রবল প্রতিক্রিয়াশীল। তার সময়ে উদারনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ভাবধারার বিরুদ্ধে অবিরাম অভিযান চলে। স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য তিনি আপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় রাশিয়ার সর্বত্র বিক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিলে তিনি তা কঠোর হস্তে দমন করেন। তিনি একদিকে যেমন বাস্তবপন্থি, অন্যদিকে প্রাচীনপন্থি ও সংস্কার বিরোধী ছিলেন। তবে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় প্রথম নিকোলাস মেটারনিকের প্রভাব হতে নিজেকে মুক্ত রেখে ইউরোপের রাজনীতিতে রাশিয়ার সম্মান ও প্রতিপত্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি করেন।
→ জার প্রথম নিকোলাসের বৈদেশিক নীতি : জার প্রথম নিকোলাসের পররাষ্ট্রনীতি/বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ইউরোপের রক্ষণশীলতার প্রতি সমর্থন : গৌরনিকের মতো জার প্রথম নিকোলাস ও ইউরোপের রক্ষণশীলতাকে সমর্থন করেন। রক্ষণশীল মনোবৃত্তির ফলেই জার প্রথম নিকোলাস সাম্রাজ্যের সকল প্রভাব বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন।
২. গ্রিস বিদ্রোহ মোকাবিলা : তুরস্কের বিরুদ্ধে গ্রিসে বিদ্রোহ দেখা দিলে নিকোলাস তা দমনের জন্য উদ্যত হন। নাভারিনের যুদ্ধে তুরস্ক পরাজিত হলে জার প্রথম নিকোলাস তুরস্কের উপর আদ্রিয়ানোপলের সন্ধি চাপিয়ে দেন। ফলে এর মাধ্যমে গ্রিসের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয় এবং গ্রিস পরোক্ষভাবে রাশিয়ার আশ্রিত রাজ্য পরিণত হয়।
৩. পোল্যান্ডের বিদ্রোহ দমন : ১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবের ফলে পোল্যান্ডে জাতীয় বিদ্রোহ দেখা দেয়। নিকোলাস তা কঠোরহস্তে মোকাবিলা করেন। এমনকি তিনি পোলিশদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার নাকচ করে দেন এবং পোল্যান্ডে রুশ নীতি বলবৎ রাখেন ।
৪. প্যারিসের সন্ধি : প্যারিস সন্ধির মাধ্যমে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটে। ভবিষ্যতে তুরস্ক যাতে রুশদের দ্বারা আক্রান্ত না হয় : সেজন্য ক্রিমিয়ার যুদ্ধে বিজয়ী শক্তিবর্গ বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। মোলদাতিয়া ও ওয়ালবিয়া অঞ্চল থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করা হয়। রাশিয়া বেসারাবিয়া প্রদেশ হরসূকে ফেরত দেয়।
৫. উনকিয়ার স্কেলেসির সন্ধি : জার প্রথম নিকোলাস উনকিয়ার স্কেলেসির সন্ধির মাধ্যমে দার্দানেলিস প্রণালিতে অবাধে রুশ জাহাজ চলাচলের অধিকার লাভ করেন। মূলত তুর্কি সরকার বিদ্রোহী সামন্ত মুহাম্মদ আলীকে দমন করার জন্য রাশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছিলেন, এই সাহায্যের প্রতিদান স্বরূপ রাশিয়া এই সুবিধা লাভ করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জার প্রথম নিকোলাসের শাসনামলে রাশিয়ার বৈদেশিক সম্পর্ক তেমন শক্তিশালী ছিল না। আর্মোনিয়ানদের নিকট পরাজিত হওয়ার পর অবশেষে প্যারিসের সন্ধির মাধ্যমে রাশিয়াকে দুর্বল করে ফেলা হয়। এতে জার নিকোলাস হতোদ্যম হয়ে পড়েন এবং রাশিয়া অথযাত্রাও থমকে দাঁড়ায় ।