ভূমিকা : ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং অ্যাক্টের অবক্ষয়ের ফলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। যার মাধ্যমে ব্রিটিশ কোম্পানির সকল দুর্নীতি রোধে সক্ষম হয়। পিটের ভারত আইন : রেগুলেটিং অ্যাক্টের পরম্পরায় ব্যর্থতার জেরবশত ফক্স ও নর্থ এর কোয়ালিশন সরকার নতুন ব ভারত পার্লামেন্ট আইন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। কিন্তু ব তা তৃতীয় রাজার বিরোধিতার জেরবশত বিলুপ্ত হয়। সর্বশেষ তাদের অদক্ষতার ফলশ্রুতিতে জনপ্রিয়হীনতার কারণে তাদের সরকারের পতন হয়। তখন রাজা তৃতীয় জর্জ পিটকে সরকার গঠনের নিয়ন্ত্রণ জানান। তাই পিট ১৭৮৪ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় শাসনের রূপরেখা নিয়ে বিল উত্থাপন করেন। যা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে জয়ী হয়। আর ইহাই পিট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট নামে পরিচিতি |
→ পিটের ভারত আইনের ধারাসমূহ : ফক্স সরকারের পতনের পর পিট সরকার গঠন করেই ব্রিটিশ কোম্পানির শাসন ক্ষমতা রাষ্ট্রীয়করণের উপর নজর দেন। তাই তিনি ১৭৮৪ সালে পিট ভারতীয় আইন প্রয়োগ করেন। যার রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা । নিম্নে তা আলোকপাত করা হলো :-
১. বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠন : মন্ত্রিপরিষদের একজন সিনিয়র সদস্যকে প্রধান করে সর্বোচ্চ ৬ জন পার্লামেন্ট সদস্য নিয়ে একটি বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠিত হবে। এর কাজ হবে ইস্ট ইন্ডিজ কোম্পানির রাজ্য পরিচালনার কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করা। কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স একটি গোপন কমিটি গঠন যার কাজ হচ্ছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ও কোর্ট অব ডাইরেক্টস এর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করা ।
২. গভর্নর জেনারেল কাউন্সিল গঠন : তিনজন সদস্য নিয়ে গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিল গঠিত হবে। (পূর্বে ছিল চারজন) । এদের মধ্যে একজন থাকবেন ভারতবর্ষে রাজার সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন- চিপ। কাউন্সিল সভায় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে সদস্যগণ সমান দু'ভাগে বিভক্ত হলে গভর্নর জেনারেল তার নিজের ভোট ছাড়া ও নির্ণায়ক ভোট প্রদান করতে পারবেন ।
৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রয়োগ : ব্রিটিশ সরকারকে রাজস্ব প্রশাসন নিয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করে পরিমিত হারে রাজস্ব চাহিদার বিনিময়ে জমিদারদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে হবে। নতুন রাজ্য শাসনের জন্য সরকারকে অবশ্যই স্থায়ী বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।
৪. যাবতীয় সম্পদের হিসাব জারি : ব্রিটিশ সরকারের অধীন সামরিক ও বেসামরিক সকল কর্মকর্তাদের চাকরিতে যোগ দানের দু'মাসের মধ্যে ভারতবর্ষে ও ব্রিটেনে তাদের যাবতীয় সম্পদের একটি পূর্ণ তালিকা কোর্ট অব ডাইরেক্টস-এর নিকট পেশ করতে হবে।
৫. শাস্তির বিধান প্রয়োগ : দুর্নীতির দায়ে সাব্যস্ত এমন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তাদের অপরাধের ভিত্তিতে সমাপ্তি বাজেয়াপ্তকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ ও কারাদণ্ডসহ গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
৬. উপঢৌকন গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা : ব্রিটিশ কোম্পানি ও ইংরেজ করা শাসকদের জন্য সম্পূর্ণভাবে উপঢৌকন গ্রহণ করা নিষিদ্ধ হয়। বলা হয় রাজা, জমিদার ও অন্যান্য ভারতীয়দের নিকট থেকে নগদ টাকায় বা দ্রব্যে ভেট, পুরস্কার বা উপঢৌকন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলো। এ সকল অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বিচারের সম্মুখীন হবেন।
৭. কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ : পিট ভারতীয় আইন বাস্তবায়নের জন্য পার্লামেন্ট লর্ড কর্নওয়ালিশকে সরাসরি নিয়োগ দান করেন ১৭৮৬ সালে গভর্নর জেনারেল হিসেবে যোগদানের অব্যবহিত পরেই কর্নওয়ালিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক অর্পিত সংস্কারমূলক দায়িত্ব পালনে তৎপর হন। ১৭৯৩ সালে তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন একটি বিচার বিষয়ক কার্যবিধি ঘোষণা করেন এবং প্রমাসনিক ও পুলিশ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পিট ভারতীয় আইন ব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রশাসনিক ও রাজস্ব ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনেন। তিনি সবচেয়ে বেশি জোরদার করেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কেননা তার পূর্ববর্তী প্রশাসন এই দুর্নীতির দায়ে জনপ্রিয়তা হারিয়ে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়। আর সর্বশেষ তা বাস্তবায়নের জন্য লর্ড কর্নওয়ালিশকে ভারতীয় উপমহাদেশ গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন। আর তিনিই পিট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্টের কার্যাদি সম্পন্ন করেন।