ভূমিকা : বঙ্গভঙ্গ ভারতবর্ষের এক ঐতিহাসিক ঘটনা । এর মাধ্যমে তৎকালীন ভারতের সর্ববৃহৎ বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করে দুইটি আলাদা প্রদেশ গঠন করা হয়। ব্রিটিশ শাসকেরা যদিও বঙ্গভঙ্গের পেছনে প্রশাসনিক কারণ বিশেষভাবে উল্লেখ করে । তথাপি এর পেছনের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি ছিল। ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম কৌশল বিভক্তকরণ নীতির অন্যতম উদাহরণ ছিল এই বঙ্গভঙ্গ ।
→ বঙ্গভঙ্গের রাজনৈতিক কারণ : ব্রিটিশ ভারতের বড়লাট লর্ড কার্জন সুপরিকল্পিতভাবে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বঙ্গভঙ্গ করেছিলেন। বঙ্গভঙ্গের পেছনে রাজনৈতিক কারণ নিচে আলোচনা করা হলো :
তৎকালীন সময়ে বাংলা প্রদেশের রাজধানী ছিল কলকাতা। আর এই কলকাতা ছিল ভারতীয় গণজাগরণ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। এ সময় চরমপন্থি নেতাদের প্রভাবে
বাংলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। ভারতীয়দের মধ্যে এই উগ্র জাতীয়তাবাদীদের প্রসার ব্রিটিশ শাসকদের পক্ষে মোটেও নিরাপদ ছিল না। এ কারণে লর্ড ক. কার্জন এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমন করতে তৎপর হন ।
অনেকের মতে, বঙ্গভঙ্গ ছিল লর্ড কার্জনের সুপরিকল্পিত র | রাজনৈতিক বিভক্তিকরণ নীতির বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গভঙ্গ করা হলে র পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা অধিক সুবিধা ভোগ করবে। ফলে তারা ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে। একই সাথে ভারতের জাতীয় আন্দোলনও দুর্বল হয়ে পড়বে যা ব্রিটিশ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য অধিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গের পেছনে যেসব কারণ ছিল তার মধ্যে রাজনৈতিক কারণ ছিল অন্যতম । কেননা ব্রিটিশদের শাসন নীতিই ছিল বিভক্তকরণ করা ও শাসন পরিচালনা করা। সুতরাং, উপরিউক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ করেছিল। যা ভারতের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয় ।