ভূমিকা : ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিজয় ধরা হয় যে ঘোষণাটিকে সেটি হলো ব্যালফোর ঘোষণা। ১৯১৪ সালের ১ম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে তাদের আবাসভূমি স্থাপনের ব্যাপারে মিত্র পক্ষের অঙ্গীকার আদায়ের চেষ্টা করে। ব্রিটেন শুরুতে ইহুদিদের উগান্ডায় বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। ড. ওয়াইজম্যানের প্রচেষ্টায় ইহুদিদের দাবির মাধ্যমে ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্র সচিব লর্ড ব্যালফোর একটি প্রস্তাব পাস করায় সে প্রস্তাবই ব্যালফোর ঘোষণা নামে পরিচিত লাভ করে ।
→ ব্যালফোর ঘোষণা : হারৎজেল, লুই ব্রান্ডাইস ও ডক্টর হাইম ওয়াইজম্যানের নেতৃত্বে গড়ে উঠা ইহুদিবাদী আন্দোলন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কিছুটা আশার মুখ দেখে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্য পতনের পর ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে বসবাস করার জন্য কর্তৃপক্ষের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে থাকে। ড. ওয়াইজম্যানের প্রচেষ্টায় ইহুদিরা ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইহুদিদের সমর্থন আদায় করে। ইহুদিদের কূটনীতির প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্র সচিব লর্ড ব্যালফোর ১৯১৭ সালে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার সমর্থনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ প্রস্তাব পাস করে। লর্ড ব্যালফোর প্রচেষ্টায় প্রস্তাবটি পাস হয় বলে একে 'ব্যালফোর ঘোষণা' বলা হয়। ব্যালফোর ঘোষণার জের ধরে ড. ওয়াইজম্যান ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে দু'বিষয়ের প্রয়োজন অনুভব করেন। সেগুলো হলো, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে ইহুদিদের জন্য আলাদা ভূখণ্ডের ব্যবস্থা করা ও ইহুদি রাষ্ট্র ত্যাগীদের জন্য আলাদা ভূখণ্ডের ব্যবস্থা করা। এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ইহুদিদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় বলে ব্যালফোর ঘোষণা ছিল ইহুদিদের জন্য এক মহা বিজয়। তারা ব্রিটেন ও আমেরিকার সহায়তায় ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় খুব দ্রুত এগিয়ে যায় এবং ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়।
উপসংহার : বিশ্বের মানবতাবাদী নামধারী ব্রিটেন ও আমেরিকা বিশ্ব মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার ঘোষণা দেয়। জুলুম, নির্যাতনের জাতাকলে পিষ্ট করে অতিষ্ঠ করে তোলা হয় ফিলিস্তিনিদের। তাড়িয়ে দেয়া হয় তাদের আবাস ভূমি থেকে। পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের শস্যক্ষেত্র। চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের পালিত পশুকে। মধ্যপ্রাচ্যের কীট স্বরূপ আবির্ভূত হওয়া এ রাষ্ট্র আমেরিকা ও ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব থেকে জন্মগ্রহণ করে ।