ভূমিকা : বলশেভিক বিপ্লবের ইতিহাসে ব্রেস্ট পেটভস্কের সন্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও জাতীয় জীবনকে সুদৃঢ় ভিত্তিতে স্থাপনের মতো সমস্যাবলি থাকা সত্ত্বেও বলশেভিক সরকার পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে শান্তি স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। সদ্য প্রতিষ্ঠিত বলশেভিক সরকার রাষ্ট্রীয় শক্তি ও সামর্থ্য বৈদেশিক যুদ্ধে জয় না করে অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রতি মনযোগ প্রদানের জন্যই জার্মানির সঙ্গে লিটভস্কের সন্ধি স্বাক্ষর করে।
→ ব্রেস্ট লিটভস্কের সন্ধি : রাষ্ট্রে শান্তি স্থাপনের ম্যান্ডেট নিয়েই শাসনভার গ্রহণ করে বলশেভিক সরকার। বলশেভিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রটস্কি ১৯১৭ সালের ২১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির রাষ্ট্রদূতদের নিকট সকল ফ্রন্টে যুদ্ধ বন্ধের জন্য রুশ সিদ্ধান্ত জানান দিয়ে দেন। বলশেভিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার ফলে জার্মানি ৬ দিন পর ২৭ নভেম্বর যুদ্ধ বন্ধের স্বীকৃতি এবং ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ হয়। এহেন মুহূর্তে প্রয়োজন পড়ে শান্তি চুক্তি। ফলে উভয় পক্ষ শান্তি আলোচনার জন্য ব্রেস্ট লিটভস্কে মিলিত হয়। দীর্ঘদিন আলোচনার পর ১৯১৮ সালের ৩ মার্চ ব্রেস্ট লিটভস্কের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। রাশিয়া ও জার্মানি ছাড়াও অস্ট্রে-হাঙ্গেরি, ওসমানীয় সাম্রাজ্য ও বুলগেরিয়া এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। সন্ধি স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে রাশিয়া পোল্যান্ড, এস্তেনিয়া ও লিথুয়ানিয়া হতে পিছু হটে।
ফলাফল : এ চুক্তির ফলে রাশিয়া যে সকল এলাকার দাবি ত্যাগ করে স্থির হয় যে, এগুলোর ভাগ্য কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা নির্ধারিত হবে। রাশিয়া আনাতোলিয়া হতে সরে যায় এবং ফারস ও আর্দাহাম উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ফেরত দেয়। ব্রেস্ট লিটভস্কে সন্ধির সুযোগ নিয়ে ইউক্রেন ও জার্মানির সাহায্যে মাথা তুলে দাঁড়ায় এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করলে রাশিয়া তা মেনেও নেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কেন্দ্রীয় ঐক্যজোটভুক্ত দেশগুলোর জন্য ব্রেস্ট লিটভস্কের সন্ধি একটি বিরাট সফলতার বিষয়। এ যুদ্ধের ফলে রাশিয়া জার্মানির সকল শর্ত মেনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায়। যদিও ১৯১৮ সালের গ্রীষ্মের পরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে জার্মানি, অস্টো-হাঙ্গেরি ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত হয় ।