ভূমিকা : ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় ভারতবাসীর জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফলতার মুখ দেখেনি। ১৯৪৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এটলির ঘোষণায় ভবিষ্যৎ সংবিধান নিয়ে আলোচনার জন্য একটি মিশন পাঠানো হয়। এ মিশনের সদস্যরা হলেন- ভারত সচিব লর্ড প্যাথিক লরেনস, স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস, এ.ডি আলেকজেন্ডার, এ মিশন যে উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার ঐক্যমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে এ পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় । তবে এ মিশন সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি ।
→ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার ব্যর্থতা : ১৯৪৬ সালের ১৬ জুন | বড়লাট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন সম্পর্কে নিজেদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়াভেল অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে মুসলিম লীগকে কংগ্রেসের সমান সংখ্যাক সদস্যপদ দানে সম্মত হয়। এ ঘোষণার পর মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে লর্ড ওয়াভেল পূর্ব চুক্তি রক্ষা করতে পারেনি। | মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাব | সংবলিত। এদিকে কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সভাপতি জহরলাল নেহেরু ক্যাবিনেট মিশনে যোগদানের কথা বলেন। অন্যদিকে ২১ জুলাই বড়লাট ওয়াভেল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদানের জন্য নেহেরু ও জিন্নাহকে আমন্ত্রণ জানান। মুসলিম লীগ নেহেরুর বিবৃতির পর মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন। তখন কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অবশ্য এ প্রস্তাব লর্ড ওয়াভেলের পক্ষ থেকে আসে। এর প্রতিবাদস্বরূপ মুসলিম লীগ ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ কর্মপন্থা দিবস ঘোষণা করেন। ফলে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দেয়। ফলাফল স্বরূপ মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গঠিত হয়। নিজেদের কল্যাণের উদ্দেশ্য কিন্তু এ সরকার বাস্তবে অকার্যকর রয়ে যায়। সবখানে মুসলিম লীগের অসহযোগীতায় একটি অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস প্রদেশের গ্রুপিং ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারে না। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার উভয়কেই নিয়ে একটি ভারতীয় বৈঠকের আহ্বান জানান। যদিও ব্রিটিশ সরকারের আহ্বানে পরবর্তীতে গণপরিষদের বৈঠক আহ্বান করা হয় কিন্তু মুসলিম লীগ এ আহ্বান সাড়া দেয় না। ফলে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে দাঙ্গা-দাঙ্গামা পারস্পরিক সন্দেহ আরো মাত্রাতিরিক্ত আকার ধারণ করে। আর এই অশান্তময় অবস্থায় মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা | মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস তথা ভারতবাসীর জন্য একটি কল্যাণকর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু উভয়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের কারণে শেষ পর্যন্ত এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। তবে এ পরিকল্পনার মধ্যে ভারত বিভক্তির বীজ নিহিত ছিল বলা যায় ।