ভূমিকা : ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে তাদের ঔপনিবেশিক শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য একেক সময় একেক ধরনের প্রস্তাব পেশ করে ভারতবাসীদের আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে থাকে । এগুলোর মধ্যে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ছিল ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এটলির ঘোষণায় ভবিষ্যৎ সংবিধান নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি মিশন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
→ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা : ব্রিটিশদের পক্ষে ভারতের শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা নিয়ে একটি দল ভারতে আসে আলোচনার জন্য। এ মিশনে সদস্য তিনজন হলেন ভারত সচিব লর্ড প্যাট্রিক লরেন্স, বাণিজ্য বোর্ডের সভাপতি স্যার স্টফোর্ড ক্রিপস, নৌবিভাগের প্রথম লর্ড এ. ভি আলেকজান্ডার। এ মিশন বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনা করেন। কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক দলের সাথে এ মিশনের আলোচনায় ঐকমত্য না হওয়ায় তারা নিজেদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যা মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা নামে খ্যাত ।
মন্ত্রিমিশন ভারতের স্বাধীনতা প্রদানের পদ্ধতি প্রণয়ন এবং ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেন। কিন্তু উভয় দলের মধ্যে মতৈক্য সৃষ্টি না হওয়ায় মন্ত্রিমিশন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। অবশেষে মন্ত্রিমিশন দ্রুত সংবিধান প্রতিষ্ঠাকল্পে ১৯৪৬ সালের ১৬ মে তার নিজস্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এটাই মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা বা 'Cabinet mission plan' নামে পরিচিত । পরিকল্পনাটি ছিল সুদূরপ্রসারী ও গুরুত্বপূর্ণ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ছিল অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ। এতে ভারতে ভবিষ্যৎ সংবিধান সম্পর্কিত সুপারিশ গণপরিষদ সংক্রান্ত ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু নীতিগতভাবে ভারতের প্রধান দুইটি দল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সিদ্ধান্ত হীনতার কারণে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় ।