ভূমিকা : প্রথম মহাযুদ্ধ (১৯১৪-১৮) খ্রি: তুর্কি সাম্রাজ্যের উপর মারাত্মক আঘাত হানে। তার কিছুকাল আগেই এই মহান ব্যক্তির জন্ম। তিনি ছিলেন আধুনিক তুরস্কের জনক। তুরস্ক যখন ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ঠিক তখনি কামাল পাশা তার নিজস্ব মেধা দিয়ে আবার তুরস্ককে নতুন জীবন দান করেন এবং তুরস্কের মানুষের মনে নতুন আশা জাগরণ করেন। নিম্নে কামাল পাশার পরিচয় আলোচনা করা হলো-
→ কামাল পাশার পরিচয় : গাজী মুস্তফা কামাল পাশার মতো অনন্য সাধারণ ব্যক্তি পৃথিবীতে খুব কমই এসেছেন। পৃথিবীতে যেসব লোক ভাগ্যবিধাতা হিসেবে এসেছেন এবং ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন মোস্তফা কামাল তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এ সুযোগ্য সন্তান ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে স্যালোনিকা নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাতা তেমন ধনী ছিল না। তার পিতা আলী রেজা স্যালোনিকার শুল্ক বিভাগের একজন সামান্য কেরানী ছিল । কামাল পাশার বয়স যখন ৭ বছর তখন তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি উন্নতির জন্য ব্যবসা আরম্ভ করেন। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যু হওয়ায় তার সে আশা ভরসা সব ব্যর্থ হয়। পিতার সার্বিক অবস্থা সচ্ছল না থাকায় কামালকে তার প্রাথমিক জীবনে অতি দুঃখ কষ্টের ভিতর দিয়ে কাটাতে হয়। আলী রেজার মৃত্যুর পর কামালের মাতা জোবায়দা, ছেলেকে নিয়ে মহাবিপদে পড়লেন। তিনি ছেলেকে নিয়ে ভাইয়ের বাসায় উঠলেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ও দূরদর্শী মহিলা ছিলেন। জোবায়দা ছেলেকে এক মসজিদ স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। কিন্তু কামালের এ জীবন ভালো লাগে না । ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে দেখে মাতা তাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আনলেন এবং কামালকে মনাস্তীর নামক এক পার্শ্ববর্তী শহরের মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করলেন। এ স্কুলের হোজা নামক এক আরবিয় শিক্ষক কামালকে কোন এক ছাত্রের সাথে ঝগড়া করার সময়ে বেত্রাঘাত করেন। এমন শারীরিক শাস্তি কামালের মধ্যে এক উত্তেজনা সৃষ্টি করল । তিনি চিরদিনের জন্য স্কুল ত্যাগ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দান করতে ইচ্ছা করলেন । তিনি সেখান থেকে পলায়ন করে মাতার অনুমতি ব্যতিরেকেই স্যালোনিকার এক সামরিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন । এখানে তিনি তার স্বাভাবিক পথ খুঁজে পেলেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তাঁর ব্যবহার ও কার্যের দ্বারা শিক্ষকদের মন জয় করলেন। মোস্তফা কামাল প্রত্যেক পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান অধিকার করতেন। এ স্কুলের শিক্ষক মোস্তফাই তাকে কামাল নামে ভূষিত করেন। স্যালোনিকার শিক্ষা শেষ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য সামরিক বিদ্যালয়ে যান। এ সময় তিনি ফরাসিসহ আরো অনেক ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ওয়াতনে যোগদান করেন। কামাল পাশা ১৯৩৮ খ্রি. নভেম্বর মাসে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কামাল পাশা ছিলেন তুরস্কের মডেল। তুরস্ককে তিনি অনেক বেশি উন্নত করেন। বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে তিনি তুরস্ককে রুগ্নতা থেকে মুক্তি দান করেন। তার মৃত্যু শুধু তুরস্কের নয়, শুধু প্রাচ্যের নয়, সমগ্র মুসলিম জাহানের অপূরণীয় ক্ষতি ।