ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বের ম্যান্ডেটরি শাসনব্যবস্থা একটি আলোচিত ও সমালোচিত শাসনব্যবস্থা। মিত্র শক্তিবর্গ যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে পরাজিত অক্ষ শক্তির দেশগুলোর সম্পদবহুল বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা চালায় তারই পরিমার্জিত করা ছিল ম্যান্ডেটরি শাসনব্যবস্থা। ম্যান্ডেটরি শাসনব্যবস্থা ছিল মূলত লীগ অব নেশনসের তত্ত্বাবধানে উপনেবেশিক শাসনব্যবস্থার আধুনিক রূপ। নিম্নে প্রশ্নালোকে ম্যান্ডেটরি শাসনব্যবস্থার পরিচয় দেওয়া হলো :
আভিধানিক অর্থ : ইংরেজি Mandate শব্দের বাংলা পরিভাষা দাঁড়ায় কার্যভার অর্পণ বা আদেশ দান। অন্য কথায় এটাকে শাসনের অনুমোদনও বলা যেতে পারে। ম্যান্ডেটরি শাসনব্যবস্থা নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রযুক্ত হয় ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা ম্যান্ডেটরি শাসন কাঠামো বিষয়ে Encyclopedia-তে বলা হয়েছে যে, ““The mandate system was a compronise between the Allies wish to retain the former germen and Turkish colonies and mandate an authorization granted by the league of nations to a member nation to govern a former German or Turkish colony. The terettory was called a mandated teritory or mandate."
ড. নজরুল ইসলামের মতে, “জাতিপুঞ্জ বা অনরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনো রাষ্ট্রকে প্রদত্ত ভিন্ন দেখা শাসনের অধিকারই হলো ম্যান্ডেট।”.
জী ব্যবহারিক অর্থে : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ও অটোমান সালতানাত অক্ষ শক্তি হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, ফ্রান্স ইতালিসহ অন্যান্যদের মিত্রশক্তির কাছে পরাজিত হয়। ফলে জার্মানি ও অটোমান সালতানাতের অঞ্চলগুলোতে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়। তাই বিজয়ী মিত্র শক্তি প্যারিস সম্মেলনে জার্মানি ও অটোমান সালতানাতের সম্পদশালী অঞ্চলগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এ সময় মিত্র শক্তিবর্গ নিজেদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে সেই চেষ্টা বিলম্বিত হয়। তাই লীগ অব নেশনস গঠিত হওয়ার পর এর মধ্যস্থতায় ম্যান্ডেটরি শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। ম্যান্ডেটগুলো দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল । যথা-
(ক) মধ্যপ্রাচ্য তথা পশ্চিম এশিয়ায় ম্যান্ডেট এখানে ফ্রান্স ও ব্রিটেন ম্যান্ডেটরি শাসন কায়েম করে ।
(খ) আফ্রিকান ম্যান্ডেট এখানকার সিরিয়া ও লেবাননের ম্যান্ডেট লাভ করে ফ্রান্স আর প্যালেস্টাইন, ট্রান্সজর্ডান মেসোপটেমীয়ার ম্যান্ডেট লাভ করে গ্রেট ব্রিটেন
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ম্যান্ডেটরি শাসনব্যবস্থা ছিল মূলত ঔপনেবিশিক শাসন কাঠামোরই আধুনিকতম রূপ । এর মাধ্যমে জার্মান রাষ্ট্র ও অটোমান সালতানাতের বিভিন্ন সম্পদশালী অঞ্চলগুলো ফ্রান্স ব্রিটেন নিজেদের মধ্যে লীগ অব নেশাসনের সহায়তায় ভাগ বাটোয়ারা করে দেন।