ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতবাসীর সাহায্য সহযোগিতার প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করতেই ১৯১৯ সালে ভারতে যে দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থায় প্রবর্তন করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা কার্যকরী হয়নি। তাই জাতীয় কংগ্রেস আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। ফলে, সরকার তাৎক্ষণিক কিছু দমনমূলক আইন পাস করে ।
→ রাওলাট অ্যাক্ট:দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত
ভারতীয়দের উপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচার ভারতবাসীকে ক্ষুদ্ধ অথবা করে তোলে। ফলে এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ আন্দোলন সংঘটিত হয় এবং ভারতের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস সবকিছু দমন বা সশস্ত্র আন্দোলন পুনরায় সংঘঠিত হতে শুরু করে। খলিফা এমতাবস্থায় ভারত সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং যুগে ভারতীয়দের সকল প্রকার রাজনৈতিক আন্দোলন দমন করতে ইতিহা নতুন এক আইন প্রণয়নের প্রয়োজন অনুভব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বড় লাটের আইন সচিব স্যার সিডনি রাওলাটকে শব্দের সভাপতি করে একটি কমিটি ভারতে প্রেরণ করা হয়। এ কমিটি | প্রতিনি সরজমিনে অবস্থা তদন্ত শেষে দু'ধরনের আইন প্রণয়নের | এখাে সুপারিশ করে রিপোর্ট পেশ করে। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার দুটি বিল তৈরি করে এবং ১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় আইন সভায় বিল দুটি পাস হয়। কমিটির সভাপতির কিছু নাম হিসেবে এ আইন রাওলাট নামে পরিচিত। এ আইনের আওতায় যে দুটি বিল পাস হয় তা হলো নিম্নরূপঃ
১. প্রথম রাওলাট বিলে রাজবিদ্রোহ মামলা বিচার করার জন্য নতুন একটি বিচারালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয় ।
২. দ্বিতীয় রাওলাট বিলে রুদ্ধদ্বার আদালত সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বিনা উকিলের সাহায্যে বিচার করে অভ্যন্তরীণ বা বিনা বিচারে আটক করে রাখার ব্যবস্থা করা হয় ৷
→ প্রতিক্রিয়া : এ আইনের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মলিব্য ও মাজহার- উল- হক আইন পরিষদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন এবং ভাইসরয়ের নিকট লিখিত এক প্রতিবাদ পত্রে জিন্নাহ মন্তব্য করেন যে, এ আইনের দ্বারা ন্যায়বিচারের মূল আদর্শ ধ্বংস করা হয়েছে এবং যে | হি সমস্ত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো কারণ ছিল না সে সময় জনগণের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে ।
সমালোচনা : এ আইনের সমালোচনা করে গান্ধী বলেছেন- আপিল নেই দলিল নেই উকিল নেই এবং এ আইনের প্রতিবাদে তাঁর ডাকে ১৯১৯ সালের ১৩ মার্চ দেশ ব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয় এবং স্থানে স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়। পরে আন্দোলন দমন করার জন্য ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল। অমৃতসরের শাসনকর্তা জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে সুসজ্জিত সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে শত শত লোককে হত্যা করে। ফলে সমগ্র দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায যে, রাওলাট আইন ছিল ব্রিটিশ সরকারের শোষণের হাতিয়ার। যে হাতিয়ার প্রয়োগ করে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের উপর অত্যাচার নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছিল এবং অগণিত নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করেছিল। তবে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছিল।