ভূমিকা : যখন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সোভিয়েত রাশিয়ায় সংঘটিত হয় তখন এটিকে মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। এজন্য রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের ধারা সূচনাতেই বিনষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে তারাও বিদেশি পুঁজিবাদী শক্তি। বৈদেশিক আক্রমণ হস্তক্ষেপকারীরা রাশিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় দেশের ভূ-স্বামী ও পুঁজিপতিদের সহায়তায় । সেই সাথে সমাজতন্ত্রকে সরিয়ে পুরাতন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য তৎপর হয়ে উঠে তারা।
গৃহযুদ্ধ : গৃহযুদ্ধ এক ধরনের যুদ্ধ যা নির্দিষ্ট কোন রাষ্ট্র বা দেশের অভ্যন্তরে সাংগঠনিকভাবে দুই বা ততোধিক দল বা গোষ্ঠী সরাসরি যুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সাধারণ অর্থে গৃহযুদ্ধের ফলে দুটি স্বাধীন দেশ সৃষ্ট হয় যা পূর্বে একীভূত দেশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এক পক্ষ কর্তৃক দেশ বা এলাকা নিয়ন্ত্রণ, অঞ্চল বা এলাকার স্বাধীনতা ঘোষণা অথবা সরকারের নীতি নির্ধারণে পরিবর্তনের জন্য চাপ প্রয়োগ এ যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য ।
ল্যাটিন ভাষায় “বেলাম সিভিল” শব্দ থেকে সিভিল ওয়ার (Civil war) পদটির উৎপত্তি ঘটেছে। খ্রীষ্টপূর্ব ১ম শতকে রোমান গৃহযুদ্ধে শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি ভাষায় সিভিল ওয়ার শব্দটি ইংরেজ গৃহযুদ্ধে প্রথম প্রচলন হয় ১৬৫১ সালে ।
কখনো কখনো দলভুক্ত জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণ নতুন দেশ তৈরিতে আগ্রহী নন। কিন্তু তারা তাদের অধিকারবোধ ও দাবী দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে দেশ পরিচালনা পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হতে চান। এ ধরনের গৃহযুদ্ধ মূলত দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ।
গৃহযুদ্ধ উচ্চ পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয় যাতে প্রায়ই অনুমোদনকৃত প্রশিক্ষিত, সংগঠিত বৃহৎ আকৃতির নিয়মিত সামরিক বাহিনী জড়িয়ে পড়ে।
গৃহযুদ্ধের কারণ : যখন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সোভিয়েত রাশিয়ায় সংঘটিত হয় তখন এটিকে মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। এজন্য রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের ধারা সূচনাতেই বিনষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে তারাও বিদেশি পুঁজিবাদী শক্তি। বৈদেশিক আক্রমণ হস্তক্ষেপকারীরা রাশিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় দেশের ভূ-স্বামী ও পুঁজিপতিদের সহায়তায়। সেই সাথে সমাজতন্ত্রকে সরিয়ে পুরাতন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য তৎপর হয়ে উঠে তারা। বিভিন্ন কারণে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হলেও মূলত কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে। যথা-
১. রাষ্ট্রের নেতৃত্ব গ্রহণ কিংবা দেশ পরিচালনা পদ্ধতি বিষয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে মতানৈক্য ঘটলে গৃহযুদ্ধ ঘটে। দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো একটি দল যদি নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নেয় কিংবা দু দলের মধ্যে কোনোরূপ চুক্তি সম্পাদন না হয় তাহলেও তা গৃহযুদ্ধের সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. এক দলভুক্ত জনগোষ্ঠী ভাষা-সংস্কৃতি ইত্যাদিতে ভিন্নতাজনিত কারণে যদি দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে ইচ্ছা প্রকাশ না করে তাহলেও গৃহযুদ্ধ হতে পারে। এ ধরনের বুদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদ নামে পরিচিত। তখন তারা দেশ বিভাজন করে নতুন একটি স্বাধীন দেশের জন্যে গৃহযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়। খুব কমসংখ্যক জাতীয় নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নিতে পারেন। অধিকাংশ জাতীয় নেতা-ই দেশ বিভাজনে অংশ নিতে চান না যার ফলশ্রুতিতে অনিবার্যভাবে তা গৃহযুদ্ধের আকারে মোড় নেয় ।
৩. রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হলে বৈদেশিক পুঁজিপতি রাষ্ট্রগুলো একে মেনে নিতে পারেনি। তারা এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তাদের ভয় ছিল এমন বিপ্লব তাদের দেশে হলেও তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য তারা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর থেকে তারা সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাশিয়াকে দখল করার চিন্তা করে।
৪. ফরাসি, মার্কিন ও জার্মানি সরকার সোভিয়েত সরকারে স্বীকার না করে সব ধরনের চুক্তি বাতিল করে। এছাড়া তারা সোভিয়েতে আক্রমণ করে বিভিন্ন এলাকা দখল করে এবং প্রতিবিপ্লবীদের বিভিন্নভাবে গৃহযুদ্ধে সহায়তা করে ।
৫, দেশের পুঁজিপতি ও ভূ-স্বামীরা সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুঁজিপতিরা সমাজতন্ত্রের ফলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা হারায়। তাই তারা সরকারকে সহায়তা করতে অস্বীকার করে। পুঁজিপতি ছাড়া ভূ- স্বামীরাও সমাজতন্ত্রের ঘোর বিরোধী ছিল। সমাজতন্ত্রের কারণে ভূস্বামীদের ভূমি রাষ্ট্রের অধীনে চলে গেলে তারা নিঃস্ব হয়ে যায় । তাই তারা সমাজতন্ত্র ও সরকারের বিরোধিতা করে।
৬. কখনো কখনো দলভুক্ত জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণ নতুন দেশ তৈরিতে আগ্রহী নন। কিন্তু তারা তাদের অধিকারবোধ ও দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে দেশ পরিচালনা পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হতে চান। এ ধরনের গৃহযুদ্ধ মূলত দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
যখন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সোভিয়েত রাশিয়ায় সংঘটিত হয় তখন এটিকে মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। এজন্য রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের ধারা সূচনাতেই বিনষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে তারাও বিদেশি পুঁজিবাদী শক্তি। বৈদেশিক আক্রমণ হস্তক্ষেপকারীরা রাশিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় দেশের ভূ-স্বামী ও পুঁজিপতিদের সহায়তায় । সেই সাথে সমাজতন্ত্রকে সরিয়ে পুরাতন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য তৎপর হয়ে উঠে তারা।
৭. গৃহযুদ্ধ উচ্চ পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয় যাতে প্রায়ই অনুমোদনকৃত প্রশিক্ষিত, সংগঠিত বৃহৎ আকৃতির নিয়মিত সামরিক বাহিনী জড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া সমাজতন্ত্রের কারণে আরো অনেক শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন- প্রাক্তন সরকারি অফিসার, আমলাবর্গ, যাজক শ্রেণি, ব্যাংকার ও জারের প্রাক্তন সৈন্যবাহিনী। এরা সবাই পুঁজিপতি ও ভূস্বামীদের সাথে চক্রান্তে শামিল হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গৃহযুদ্ধ একটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় ডেকে আনে। কিন্তু তারপরেও একটি দেশে গৃহযুদ্ধ অনেক কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।