ভূমিকা : ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যায়। এর সাথে ইংরেজদের শাসন শুরু হয় ভারতবর্ষে। ইংরেজরা এদেশের ক্ষমতা গ্রহণের পরে কয়েকজন লর্ডকে ভারতে পাঠিয়েছেন ভারতবর্ষ শাসন করার জন্য। লর্ড রিপন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনিই ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বপ্রথম গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন। তিনি শান্তি, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাতন্ত্র্যবাদে লাক বিশ্বাসী ছিলেন। ভারতবাসীর প্রতি লর্ড রিপন সহানুভূতিশীল ছিলেন। যার জন্য তিনি ভারতের জনগণের কল্যাণসাধনের জন্য স্থার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করেছেন। তাঁর এসব সংস্কারের জন্য বোট ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন
পূর্বে → লর্ড রিপনের সংস্কারসমূহ : ব্রিটিশ শাসিত ভারতে রতে ভারতবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন লর্ড রিপন। তিনি তিনি ভারতবাসীর জন্য কল্যাণকর কাজ করেছেন। ভারতীয় শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্রমূলক করার চেষ্টা করেছেন তিনি। বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করে ভারতবাসীর অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছেন ।
→ নিম্নে লর্ড রিপনের সংস্কারসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. শুল্ক বাতিল : লর্ড রিপন ভারতে এসে ভারতের আর্থিক ভার অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হন। ভারতের আর্থিক অবস্থা ননা স্মরণাতীত কাল থেকেই ভালো ছিল। তিনি ভারতের এসেও রিপন দেখতে পান ভারতের জনগণের আর্থিক অবস্থা ভালো আছে । যার জন্য তিনি ভারতবাসীর জন্য নতুন কিছু নিয়মকানুন তৈরি করেন। ভার | লবণ ও অন্যান্য বাণিজ্য দ্রব্যের উপর থেকে তিনি বাণিজ্য শুল্ক বাতিল করেন। তাছাড়া তিনি আয়করও রহিত করেন ।
২. রাজস্ব সংস্কার : লর্ড রিপন ভারতে ভাইসরয় হিসেবে বিধা । এসে ভারতবাসীর আর্থিক অবস্থা ভালো দেখতে পান। তাই তিনি রাজস্ব সংস্কার সাধন করেন। তিনি লর্ড লিটন কর্তৃক প্রণীত ডকে অবাধ বাণিজ্য নীতির সম্পূর্ণতা সাধন করেন। যা ভারতের কর্তা আর্থিক অবস্থা উন্নতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তিনি চিরস্থায়ী মতো | বন্দোবস্ত বাতিল করার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু ভারত সচিবের বিরোধিতার কারণে তা সফল হয়নি।
৩. সরকারি চাকরি বিধি সংস্কার : ভারতবাসীর জন্য লর্ড রিপন সহানুভূতিশীল ছিলেন। পূর্বে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়রা কো সরাসরি যোগ দিতে পারতো না। এজন্য তাদের ব্রিটেনে যেতে শাসন হতো। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদানের ন্যূনতম বয়স ছিল ১৮ বছর। তাই তিনি ভারত ও ইংল্যান্ডে একই সাথে আই.সি.এস পরীক্ষার কথা বললে হাউস অব কমন্স তা বাতিল করে। তবে তিনি বয়স ভারতীয়দের জন্য ১৮ থেকে ২১ বছর করেন।
৪. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন : লর্ড রিপন ভারতবাসীর কল্যাণের জন্য স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন প্রবর্তন করেন। তিনি ভারতের | আইন জনগণের রাজনৈতিক চেতনাকে গুরুত্ব দিয়ে ১৮৮১ সালে বঙ্গীয় মিউনিসিপ্যাল আইন লিপিবদ্ধ করেন। জেলা বোর্ড ও লোকাল বোর্ড গঠন করেন স্থানীয় লোকের নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে। এর সাথে স্থানীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট নির্মাণ তাদের হাতেই অর্পণ করেন। এছাড়া তিনি পৌরসভাগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন।
৫. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : লর্ড রিপনের পূর্বে ভারতের . ভাইসরয় ছিলেন লর্ড লিটন। তিনি ভারতবাসীর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেন। সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা বন্ধ ভারত করার জন্য লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর আশী রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের অধিকার কেড়ে নেয়। কিন্তু বুঝে লর্ড রিপন 'Vernacular Press Act' বাতিল করেন। এতে করে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত স্বাধীনতা ফিরে পায় ।
৬. শিক্ষা সংস্কার : লর্ড রিপন ভারতবাসীকে আধুনিক ভারত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছেন। যার জন্য তিনি ভারতবাসীর করে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য হান্টার কমিশন গঠন করেন। এই হয়েে কমিটি সুপারিশ করে স্থানীয় লোকাল বোর্ড, মিউনিসিপ্যাল বোর্ড ভারত ও কর্পোরেশনের হাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রশ্ন প্রাদেশিক সরকারের রাজস্বের একাংশ প্রদান করা। এই কমিটির অধিকাংশ শর্ত ব্রিটিশ সরকার মেনে নিয়েছিল ।
৭. সামাজিক সংস্কার : লর্ড রিপন ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে সামাজিক সংস্কার সাধন করেছিল। তিনি জমিদারদের রিপ অন্যায় বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এজন্য তিনি একটি প্রজাস্বত্ব আইনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করেন। এই পরিকল্পনা পরে গভর্নর জেনারেল কর্তৃক আইনে পরিণত হয়। তিনি ১৮৮১ সালে সর্বপ্রথম লোক গণনার ব্যবস্থা করেছিলেন ।
৮. বিচারব্যবস্থার বৈষম্য দূর : লর্ড রিপন ১৮৮৩ সালে ‘ইলবার্ট বিল' নামে একটি আইন প্রণয়ন করেন। এই আইনের পূর্বে কোনো ভারতীয় বিচারক ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারত না। তাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাই তিনি পারেন বিচারব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করার জন্য এই আইনের খসড়া প্রণয়ন গুরুত্ব করে। ইউরোপীয়রা এর বিরোধিতা করলে এই আইনের বিশ্বাস সংশোধন করেন। এতে বলা হয় ভারতীয় বিচারক ইউরোপীয় ভারত জুড়ির সাহায্য নিয়ে ইউরোপীয় অপরাধীর বিচার করবে
৯. আশ্রিত রাজ্যের প্রতি আচরণ : মহীশূর রাজ্যের শাসনভার রা কোম্পানির হাতে ন্যস্ত করা হয় লর্ড বেন্টিংকের আমলে । কেননা শাসনব্যবস্থার অব্যবস্থার অজুহাত এখানে দেখানো হয়। লর্ড - রিপন ভারতে ভাইসরয় হিসেবে এসে আশ্রিত রাজ্যের প্রতি ন ন্যায়সঙ্গত আচরণ করেন। কোম্পানির নিকট থেকে মহিশূর রাজ্যের শাসনভার রাজবংশের উত্তরাধিকারের কাছে ফিরিয়ে দেন লর্ড রিপন ।
১০. কারখানা আইন : ১৮৮১ সালে লর্ড রিপন ফ্যাক্টরি আইন পাস করান। এতে করে শ্রমজীবীদের সুবিধা হয়। শিশু শ্রমিকদের জন্য তিনি নয় ঘণ্টা কাজের নিয়ম করেন। এই আইনে বাধ্যতামূলক করা হয় বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি ঢেকে রাখার জন্য। এছাড়া কারখানা আইনে এক শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। যাদের দায়িত্ব হচ্ছে কারখানা আইন ঠিকমতো পালিত হচ্ছে কি না তা দেখাশোনা করা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলে লর্ড রিপন এদেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন। তিনি ভারতের জনগণের মনোভাব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি ভারতের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ভারতে তিনি মাত্র ৪ বছর শাসন করেছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে ভারতবাসীর কল্যাণসাধনে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার শাসনকাল এদেশে অধিকহারে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন আইনও প্রণয়ন করেছিলেন। যা ছিল ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও সুখের ।