ভূমিকা : যে সকল ব্যবস্থা নতুন অর্থনৈতিক নীতির অধীনে নেয়া হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ফলে সাফল্য অর্জিত হয়। রাশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সফলতা অর্জন করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধজনিত ভয়ানক অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে নতুন অর্থনৈতিক নীতি ।
নতুন অর্থনৈতিক নীতির ফলাফল : রাশিয়ার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয় ১৯২৫ সাল নাগাদ লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতির প্রভাবে। কৃষি এবং শিল্পের উৎপাদন ১৯১৩ সালের উৎপাদন পর্যায়ে পৌঁছে ১৯২৭-২৮ সাল নাগাদ ।
শিল্পজাত পণ্য ক্রয়ের জন্য কৃষকরা তাদের উদ্বৃত্ত পণ্য বাজারে বিক্রয় করে। এভাবে গ্রাম আর শহরের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগসূত্র স্থাপন হয় । শ্রমিক আর কৃষকের মধ্যে আরো জোরদার হয় মৈত্রী জোট। অপরদিকে, শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া রাশিয়া উন্নতি লাভ করে রেলপথ, জল, পরিবহণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে।
পুঁজিপতি ও ভূ-স্বামীদের নতুন অর্থনৈতিক নীতির কলে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল এ সকল প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে সাময়িককালের জন্য বিপ্লবের বিরুদ্ধাচারণ থেকে দূরে রাখা। তাদেরকে পরবর্তী সময়ে শ্রমিক ও কৃষকদের একত্র করে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করা হয়।
এই নীতির সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সুদৃঢ়করণের পথ প্রশস্ত করেছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ সাফল্য লাভ করেছিল এ উদ্দেশ্যে। নতুন অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তনের নীতি সূচনা করেছিল সামাজিক ক্ষেত্রে ও। ক্ষুদ্র কৃষকদের ভূমির উপর বাড়িয়ে দেওয়া হয় ফসল উৎপাদন। যার ফলে তারা পরিণত হয় বিত্তশালী কৃষকে ।
কুলাকরা ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় গ্রাম অঞ্চলের। একতা স্থাপিত হয় ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমিক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে। এছাড়া ক্ষমতার পালাবদলের প্রক্রিয়া শুরু হয় সামাজিক ক্ষেত্রেও। পররাষ্ট্রনীতিতে ও প্রতিফলিত হয় এই নীতির প্রভাব। রাশিয়ার কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতাবাদের অবসান ঘটে নতুন অর্থনৈতিক নীতির কারণে। রাশিয়াকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপের অনেক পুঁজিবাদী দেশ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দান করে ১৯২৪ সালের দিকে। রাশিয়ার পুঁজি বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসে ব্রিটেনসহ অনেক দেশ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মহামতি লেনিনের মহাপ্রতিভা এবং বিজ্ঞানসম্মত দূরদর্শিতার পরিচায়ক ছিল বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্যের জন্য নতুন অর্থনৈতিক নীতি। রাশিয়ার সমাজব্যবস্থাতে ব্যাপক উন্নতি সাধন হয় এই নীতির ফলে। নতুন অর্থনৈতিক নীতির গুরুত্ব সমাজতান্ত্রিক ক্ষেত্রে অপরিসীম।