ভূমিকা : সিরিয়া ফ্রান্স কর্তৃক অধিকৃত হয় ১৯২০ সালে। তুর্কি ওসমানীয় সাম্রাজ্যে সিরিয়া বলতে প্যালেস্টাইন ও লেবাননকে বুঝাত। এই দুই রাষ্ট্রকে একসাথে Levant বলা হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে আরব জনগণ বিশেষ করে আরবের ফারটাইল ক্রিসেন্টের জনগণের তুর্কি বিরোধী মনোভাব, দামেস্কাস প্রটোকল, পিকো-ম্যাকমোহন সমঝোতা প্রভৃতি ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে ১৯২০ সালে ফ্রান্স সিরিয়া দখল করে নেয়।
→ হোসেন ম্যাকমোহন পত্রালাপ : ১৯১৫ সালের ১৪ জুলাই হতে ১৯১৬ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত আরবদের পক্ষে শরীফ হোসেন ও গ্রেট ব্রিটেনের পক্ষে স্যার হেনরি ম্যাকমোহন যে দশটি পত্র বিনিময় করেন সেগুলো ইতিহাসে হোসেন ম্যাকমোহন পত্রালাপ বা "Hussain Mc mahon Correspondence" নামে পরিচিত। এ পত্রালাপে দুইটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। তা হলো-
(ক) ওসমানীয়দের বিরুদ্ধে সৈন্য সংগ্রহ করে যুদ্ধ করবে বলে শরীফ হোসেন ওয়াদা করেন এবং গ্রেট ব্রিটেন জয়ী হলে আরবদের স্বাধীনতা দিবেন বলে স্যার হেনরি ম্যাকমোহন অঙ্গীকার করেন ।
(খ) স্বাধীন আরব জাতির সীমানা নিয়েও আলোচনা করা হয় পত্রালাপগুলোতে। গ্রেট ব্রিটেন যুদ্ধে তার মিত্র শক্তি ফ্রান্সের স্বার্থের কথা চিন্তায় রেখে আরব জাতীয় সীমানা ছোট করে দেন। ম্যাকমোহন বলেন- দামেস্ক, হোমস, হ্যামাও, আলেপ্পো জেলার পশ্চিমে সিরিয়ার অংশগুলোকে সম্পূর্ণরূপে আরব বলা যায় না। তাই এ অঞ্চলগুলো স্বাধীন আরবজাতীয় সীমানার বাইরে থাকবে।এ সম্পর্কে শরীফ হোসেন বলেন, তিনি এ সীমানানীতি সাময়িকভাবে মেনে নিয়েছেন। যুদ্ধের পর এটা নিয়ে ফ্রান্সের সাথে চূড়ান্ত বুঝাপড়া করে সীমানা নির্ধারণ করবেন।
চুক্তির অস্বীকার : হোসেন ম্যাকমোহন পত্রালাপ বন্ধের পর নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সাইকস পিকো চুক্তি স্বাক্ষর করে স্বাধীন আরব রাষ্ট্রের জন্য দেয়া প্রতিশ্রুতি অস্বীকার করে। এদিকে আরবরা তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ঘটনাক্রমে ১৯১৮ সালের ২৯ অক্টোবর তুর্কিগণ মারজেদাবিকের যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে।
উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, ফরাসি বাহিনী সিরিয়া দখল করলে ফয়সালের নেতত্বে প্রতিষ্ঠিত আরব সরকারের পতন ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে ব্রিটেন ও ফ্রান্স গোপন চুক্তির মাধ্যমে ফারটাইল ক্রিসেন্টকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় এবং ১৯২০ সালে সিরিয়া দখল করে নেয় ফ্রান্স ।