ভূমিকা : সাদ জাগলুল পাশা মিশরের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি বহুল আলোচিত নাম। সাদ জগলুল পাশা তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দ্বারা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ হতে মিশরের স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত করেন। সাদ জাগলুল পাশা তার অসাধারণ দক্ষতা দ্বারা মিশরের অর্থনীতি নতুনভাবে গড়ে তোলেন। তিনি শুধু রাজ্য পরিচালনায় নয়, রাজ্য পরিচালনার পাশাপাশি রাজ্যের মানুষের মন জয়ের ক্ষেত্রেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই Hitti বলেছেন “সাদ জাগলুলের কার্যক্রম দ্রুত তাঁকে 'National' রূপে তৈরি করেছিল। নিচে সাদ জাগলুল পাশার পরিচয় আলোচনা করা হলো :
→ জন্ম : বিখ্যাত এই রাষ্ট্রনায়ক সাদ জগলুল পাশা ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মিশরের একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিশুকাল থেকেই সে ছিল খুব মেধাবী ও সুঠাম দেহের অধিকারী । তাঁর বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র ব্যক্তি। তাই সাদ জগলুল পাশাকে ছোটবেলা হতে বাবার সাথে কাজ করতে হতো।
শিক্ষা জীবন : একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেই সাদ জগলুল পাশা শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক জ্ঞানলাভ করে। গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাঁর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে মিশরের জামে আল-আসহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন। এরপরে তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে গিয়ে আইনশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন : সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এই জাতীয় নায়কের কর্মজীবনও ছিল সাফল্যমণ্ডিত। ফ্রান্সের প্যারিস থেকে আইনে উচ্চতর শিক্ষা লাভের পর মিশরের আপিল আদালতের বিচারক পদে নিযুক্ত হন। দীর্ঘ চৌদ্দবছর তিনি এই পদে নিযুক্ত ছিলেন। চাকরিতে নিযুক্ত থাকা অবস্থায় তিনি চরম দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৯০৬ সালে তিনি তাঁর দক্ষতার ফলস্বরূপ মিশরের শিক্ষামন্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক কলহের দরুণ তিনি চাকরি ছেড়ে দেন ।
রাজনৈতিক জীবন : সাদ জগলুল পাশার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় হিজবুল ওয়াতান পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে। হিজবুল ওয়াতান পার্টির প্রধান ছিল মুস্তাফা কামাল। তিনি এই পার্টিতে যোগ দেয়ার পর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আরও গতিশীল হয়ে উঠে। ১৯০৮ সালে মুস্তাফা কামালের মৃত্যুর পর তিনি ওয়াতান পার্টির প্রধান হন। এতে তার প্রভাব ও কর্তৃত্ব সুদৃঢ় হতে থাকে। ১৯১২ সালে তিনি আব্বাস হিলমীর মন্ত্রিপরিষদে বিচারমন্ত্রী নিযুক্ত হন ও পরে যুদ্ধমন্ত্রী হন। ১৯১৩ সালে তিনি তার দক্ষতার দ্বারা ব্যবস্থাপক সভায় প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।
চরিত্র : জগলুল পাশা মিশরের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রজাহৈতিষী ও দেশপ্রেমিক। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্প্র জগলুল পাশা ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ এবং বাগ্মী। তিনি তার বীরত্বের জন্য জাতীয় নায়ক নামে পরিচিতি লাভ করে ।
মৃত্যু : ১৯২৭ সালের আগস্ট মাসে মিশরের এই অবিসংবাদী নেতা মৃত্যুবরণ করেন। অতিরিক্ত পরিশ্রম ও কারাভোগের কারণে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায় এবং মাত্র ৭৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান তাঁর মৃত্যুর পরও ওয়াতান পার্টি তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়।
উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিশেষে বলা যায় যে, সাদ জগলুল পাশার নেতৃত্বে মিশর আনুষ্ঠানিকভাবে একট সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই ১৯২২ সালে মিশর স্বাধীনতা লাভ করে। অতঃপর বলা যায়, সাপ | জগলুল পাশা মিশরের বায়ু সেবন করতে না পারলেও মিশরবাসীদের জন্য সে মুক্ত বায়ু সেবনের দ্বার খুলে দিয়ে গেছেন।