ভূমিকা : সিরিয়া তৎকালীন আরব রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অন্যতম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত দেশটি অটোমান সালতানাতের অধীনেই শাসিত হতো। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সালতানাতের পরাজয়ের ফলে ফ্রান্স ও ব্রিটেন এই অঞ্চলের সম্পদশালী গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ১৯২০ সালে লীগ অব নেশাসনের মাধ্যমে বর্তমান সিরিয়া অঞ্চলের ম্যান্ডেটরি শাসন লাভ করে ফ্রান্স। কিন্তু সিরিয়া জনগণ ফরাসি
ম্যান্ডেটরি শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। নিম্নে তৎকালীন সিরিয়ার পরিচয় বর্ণিত হলো-
সিরিয়া : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব সময় পর্যন্ত বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও প্যালেস্টাইন এবং তুরস্কের এনিটডক ও আলেকজান্দ্রিয়া অঞ্চলকে একসাথে সিরিয়া বলা হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সালতানাতের পরাজয়ের ফলে এই বিশাল অঞ্চল বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গের হস্তগত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে এই অঞ্চলকে একসাথে লেভান্ট নামে ও ডাকা হতো। সিরিয়া অঞ্চলটি মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টান এই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে সমান গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ। এই অঞ্চলে হযরত দাউদ (আ.) ও তার সুযোগ্য পুত্র হযরত সুলায়মান (আ.) জন্মলাভ করায় স্থানটির আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। ৬৩৪ খ্রি. মুসলিম দিগ্বিজয়ী বীর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) সর্বপ্রথম এই বৃহত্তর সিরিয়া অঞ্চল মুসলিম খিলাফতের পতাকা নিয়ে আসেন। ১৫১৬ খ্রি. অটোমান সালতানাতভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা আরব শাসনাধীনে ছিল। ওসমানীয় শাসনামলে এই সিরিয়া অঞ্চলটি ৩টি প্রদেশে বিভক্ত করে শাসন পরিচালনা করা হতো। ১৮৩২- ১৮৪১ খ্রি. পর্যন্ত মিশরের প্রায় স্বাধীন গভর্নর মোহাম্মদ পাশার অধীনস্থ ছিল সিরিয়া অঞ্চল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয়ের পর বিপর্যস্ত বিশাল ওসমানীয় সালতানাতকে খণ্ড- বিখণ্ড করে বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গ নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেবার চেষ্টা করে। কিন্তু ১৯১৯ সালের প্যারিস শান্তি সম্মেলনে মিত্রশক্তিবর্গ স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে এই পরিকল্পনা বিলম্বিত হয়ে যায়। এরপর লীগ অব নেশসন গঠিত হলে তার সহায়তায় এই অঞ্চলের দেশগুলো মিত্রশক্তিবর্গ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। সিরিয়া অঞ্চলের ম্যান্ডেট লাভ করেন ফরাসি সরবারে, সিরিয়ায় ফরাসি ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয়তাবাদী সিরিয়া তীব্র আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে । ফরাসি সরকার সিরিয়ায় শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আনয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু স্বাধীনচেতা সিরিয়ানরা তাদের স্বাধীনতার জন্য আরো সহিংস হয়ে উঠলে অবশেষে ফরাসি সরকার ১৯৪৬ সালে সিরিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী | বিশাল ওসমানীয় শাসনাধীন সিরিয়া ভূখণ্ড যুদ্ধে বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। ফলে ১৯২০ সালে লীগ অব নেশনসের অনুমোদনক্রমে সিরিয়ায় ম্যান্ডেটরি শাসন লাভ করে ফরাসি সরকার ।