ভূমিকা : ১৯১৭ সালে দীর্ঘদিনের জার শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিপ্লবীদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য এসময় রাশিয়ার অর্থনীতি মারাত্মক সংকটে
পড়ে যায়। তাই স্ট্যালিন ১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে রুশ অর্থনীতি পুনর্গঠিত করার জন্য তার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এর ফলে রাশিয়ার সার্বিক উন্নতি সাধিত হয় ।
→ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলাফল : পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলে রাশিয়ায় শিল্পের উন্নতি এবং কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি হয় এবং শিক্ষার উন্নতি হয়। নিম্নে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১. শিল্পের উন্নতি : স্ট্যালিনের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে রাশিয়ায় শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়। এ সময় কয়লা ও খনিজ তেলের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়। লৌহ ও ইস্পাত এর উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। বৈদ্যুতিক শক্তির উৎপাদন বৃদ্ধি পায় প্রায় তিনগুণ ।
২. কৃষির উন্নতি : পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ঘোষণা করা হয় রাষ্ট্রের মোট জমির ২০% যৌথ কৃষি প্রতিষ্ঠানের অধীনে রাখা হবে। যৌথ কৃষি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ফলে কুলার নামক শক্তিশালী কৃষক গোত্রের প্রভাব প্রতিপত্তি হ্রাস পায় ।
৩. শিক্ষার উন্নতি : স্ট্যালিন প্রবর্তিত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলে রাশিয়ায় শিক্ষায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। পুঁজিবাদী চেতনার পরিবর্তে ছাত্রদের মাঝে সমাজতান্ত্রিক চেতনা বিস্তারের জন্য সারা দেশে অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছিল। সকল শিশুর জন্য ৭ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে ১৯১৩ সালের শতকরা ৭৩ জন থেকে ১৯৩৩ সালে নিরক্ষরের সংখ্যা ১৯ জনে নেমে আসে।
৪. কৃষকের অবস্থা উন্নতি : যোসেফ স্ট্যালিনের পঞ্চবর্ষিকী পরিকল্পনার ফলে রাশিয়ার কৃষকদের অবস্থা উন্নত হয় । তারা নবউদ্যমে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করে এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নে নেমে পড়ে ।
৫. রাশিয়ার অর্থনৈতিক নবজীবন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার রাশিয়ার বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা স্ট্যালিনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলে নবজীবন লাভ করে রাশিয় বিশ্ব পরিমণ্ডলে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
৬. আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি : পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলে রাশিয়ার শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটলে এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে রাশিয়ার বিদেশ নীতিতে আমদানির চেয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনীতি গতিশীল হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পরবর্তী অদূরদর্শী সমাজতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে রাজ্যে যে আর্থিক দুর্দশার সম্মুখীন হয় তা ১৯২৮ সালে স্ট্যালিনের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রবর্তনের ফলে দূর হয়, রুশ অর্থনীতি নতুন জীবন লাভ করে। রাশিয়ার বিশ্বসংগ্রামে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।