ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়নি। বস্তুত ১৭৫৭ সালের পলাশী থেকে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ পর্যন্ত সুদীর্ঘ একশত বছরের ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার, উৎপীড়ন, শোষণ এবং নির্যাতনের চরম বহিঃপ্রকাশ এই সিপাহী বিদ্রোহ।
→ সিপাহী বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণসমূহ : ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. এনফিল্ড রাইফেলের প্রবর্তন ও সিপাহীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত : ১৮৫৭ সালে সেনবাহিনীতে ‘এনফিল্ড রাইফেল' নামে এক ধরনের অস্ত্রের প্রচলন করা হয়। এই রাইফেলের কার্তুজ পশুর চর্বি মিশ্রিত ছিল যা দাঁত দিয়ে কেটে দে রাইফেলে ঢুকাতে হতো। ভারতীয় সিপাহীদের মধ্যে একথা ছড়িয়ে পড়ে যে গরু ও শূকরের চর্বি মিশ্রিত কার্তুজের প্রচলন নি করে ব্রিটিশ সরকার হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সৈন্যদের ধর্মনাশের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অধিকন্তু ব্রিটিশ রা সামরিক কর্তৃপক্ষ সিপাহীদের পক্ষে কপালে তিলক কাটা, দাঁড়ি য রাখা ও পাগড়ি পরিধান নিষিদ্ধ করে ভারতীয় সিপাহীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হানে। ফলে বিক্ষুদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বী চি সিপাহীরা প্রত্যক্ষভাবে বিদ্রোহের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
২. মঙ্গল পান্ডের বিদ্রোহ : ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুর সেনানিবাস থেকে মঙ্গল পান্ডে নামে এক ব্রাহ্মণ সিপাহী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পরে সমগ্র ভারতে এ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ভারতীয় জনগণ এর সাথে যোগ দিলে সামরিক বিদ্রোহ পরিণত হয় মহাবিদ্রোহে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর . অভিযোগ ও অসন্তোষই এই বিদ্রোহের মূল কারণ নয়; বরং এ বিদ্রোহের মূলে ছিল সর্বস্তরের মানুষের গভীর অসন্তোষ ও হতাশা। একে বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা- হাঙ্গামাও বলা যায় না। ব্যাপকভাবে এ আন্দোলন ছিল। রাজনৈতিক এবং এর লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসন ও শোষণের কবল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করা।