ভূমিকা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। আইন প্রণয়নের পর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আন্দোলন এবং স্বরাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতবাসীর সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার ১৯৩৫ সালের আইন প্রণয়ন করে গণঅসন্তোষ প্রশমনের চেষ্টা করে। এই আইনের উপর ভিত্তি করে ই পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আইন রচিত হয়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে এ আইন কোনো সম্প্রদায়কেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
→ ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ত্রুটি : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে জনগণের আশাকে নিরাশায় পরিণত করে। এই আসনের বেশ কয়েকটি ত্রুটি লক্ষণীয়
১. ব্রিটিশ সরকারের হাতে অত্যধিক ক্ষমতা প্রদান : ভারতীয়দের স্বরাজ দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি উপেক্ষা করে ১৯৩৫ সালের আইনে নতুন করে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷ ব্রিটিশ সরকার লন্ডনের ‘হোয়াইট হল' এ বসে ভারতের ভাগ্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করতো। ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন ভারত সচিব, গভর্নর জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নর ৷
২. ত্রুটিপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র : কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, দেশীয় রাজ্যগুলো নিজ নিজ স্বার্থে এ আইনের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ ও ক্ষতিকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ব্রিটিশ সরকারও এর ত্রুটি উপলব্ধি করে ১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা স্থগিত করে দেয় ।
৩. গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের অপ্রতিহত ক্ষমতা : এ ব্যবস্থায় ভারতীয় প্রদেশগুলোকে কেন্দ্রের এবং কেন্দ্রকে ব্রিটিশ রাজ্যের প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেলের অধীনে আনা হয়। তিনি ভারতীয় নয়, বরং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়ী ছিলেন। প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রবিষয়ক ক্ষমতা আইন সভার এখতিয়ারের বাইরে রেখে তার স্বৈরশাসন কায়েমের সুযোগ রাখা হয়। এছাড়াও এই আইনে প্রদেশে গভর্নরকে অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়। এভাবে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন খর্ব করা হয় ।
৪. ভারত শাসন থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন : এই আইনে ব্রিটিশ সরকারের অত্যধিক ক্ষমতা প্রয়োগ ভারতীয়দের গৌণ হিসেবে পরিণত করেছে।
৫. প্রত্যক্ষ নির্বাচন উপেক্ষা : এই আইনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনকে উপেক্ষা করে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা হয় ।
৬. দ্বৈতশাসনের ত্রুটি : ১৯১৯ সালের আইন দ্বারা প্রবর্তিত দ্বৈতশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠলেও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে দ্বৈতশাসনকে পুনরায় প্রবর্তন করা হয়।
৭. দেশীয় অনুগত রাজন্যবর্গকে অত্যধিক ক্ষমতা প্রদান : এই আইনের মাধ্যমে দেশীয় রাজন্যবর্গকে সাংবিধানিক মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং প্রদেশের শাসনকার্যে তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৮. ডোমিনিয়নের মর্যাদা থেকে ভারতবাসীকে বঞ্চিত : ভারতবাসী কংগ্রেস ও স্বরাজ দলের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দাবি ভারতবাসীকে ডোমিনয়নের মর্যাদা প্রদান উপেক্ষা করা হয় ফলে ভারতবাসী এই আইনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নানা ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভারতের শাসনতান্ত্রিক সমানাধিকারের ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। এর ভারতীয় সংবিধান রচনার ভিত রচিত হয় এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সুদৃঢ় হয় ।