ভূমিকা : কৃষক প্রজা পার্টির মূল চালিকা শক্তি ছিল বাংলার কৃষক সম্প্রদায়। এদেশের কৃষকরা সবসময় ঋণী মহাজন দ্বারা নির্যাতিত হতো যা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হককে বিচলিত করে তোলে। তিনি বাংলার কৃষক সম্প্রদায়কে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তাই তিনি অনুভব করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, এ দেশবাসীর উন্নতি নির্ভর করছে কৃষক সম্প্রদায়ের উপর । তাই তিনি এদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বাংলার কৃষকদের নিয়ে কৃষক প্রজা পার্টি গঠন করেন।
→ ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টির কর্মসূচি ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের অন্যতম বক্তব্য ছিল “প্রজাদের জন্য ডাল ভাতের ব্যবস্থা করা।” ১৯৩৬ সালের এপ্রিল মাসে কৃষক প্রজা পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে ১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে চৌদ্দ দফায় কর্মসূচি পাস করা হয়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টির উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :
১. বিনা খেসারতে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ; ২. ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করা;
৩. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন;
৪. রাজবন্দিদের মুক্তি;
৫. মহাজনদের কারবার নিয়ন্ত্রণ করা;
৬. বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা;
৭. মন্ত্রীদের বেতন ১০০০ টাকায় হ্রাস
৮. মহাজনদের সুদের হার নির্ধারণ ও
৯. দরিদ্র কৃষকদের জন্য সহজ ঋণ ব্যবস্থা।
বাংলার কৃষকদের উন্নয়ন করায় ছিল শেরে বাংলার অন্যতম লক্ষ্য। তাই তিনি বাংলার কৃষকদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সরাসরি রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছিলেন। শেরে বাংলা এক অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে বলেন, “বিধাতা আমাদের হাতে সম্মানজনক লাঙল দিয়েছিলেন, তা দিয়ে এমনভাবে জমি চাষ করব যাতে এ জমির উপর আমরা জাতীয় বীজ বপন করতে পারি।”
উপসংহার : উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, কৃষক প্রজা পার্টি ছিল বাংলার কৃষকদের অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তিলাভের অন্যতম প্রতীক। ১৯৩০ সালের নির্বাচনে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করে এবং বিপুলভাবে জয়লাভ করে। যার মাধ্যমে বাংলার ইতিহাসে ‘কৃষক প্রজা পার্টির' একটা উল্লেখযোগ্য অধ্যায় সূচিত হয় ।