ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬০০ সালে ভারতবর্ষে আসে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তবে ভারতবর্ষে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশ সরকারের অনুমতির প্রয়োজন ছিল । এজন্য কোম্পানি ১৭৯৩-১৮৫৭ সাল পর্যন্ত কয়েকটি সনদের মাধ্যমে ভারতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে The Charter Act 1793' বা সনদ আইন ১৭৯৩'।
১৭৯৩ সালের সনদ আইনের পটভূমি : ব্রিটিশ সরকার ১৭৯৩ সালে ২০ বছর মেয়াদি একটি সনদ প্রদান করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে। যার মাধ্যমে সরকার ভারতবর্ষে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনার বিধান ঠিক করে দিয়েছিল। ১৭৯৩ সালে এ সনদের মেয়াদ শেষ হয়। তাই ১৭৯৩ সালে পূর্বের সনদ নবায়নের জন্য পার্লামেন্ট এ বিষয়টি পেশ করা হয়। তখন খুব সহজেই সনদ বিলটি পার্লামেন্টে পাস হয়। যার প্রধান কারণ দুটি। যথা-
১. পার্লামেন্টের সদস্যরা কোম্পানির সনদ নবায়নের পক্ষে ছিল ।
২. এ সময় ফ্রান্সে বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যার ফলে, ব্রিটেন ফ্রান্সের আক্রমণের আশঙ্কা করে। তাই কোম্পানির সাথে কোনো বিরোধিতা করেনি। কারণ এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ধরা হয়নি।
পাশাপাশি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী। যার কারণে সরকার সনদ নবায়নের ব্যাপারে কোনো বিরোধিতা করেনি। যার ফলে খুব সহজেই ১৭৯৩ সালে পার্লামেন্ট সনদ বিলটি পাস হয়। যা 'The Charter Act, 1793 বা সনদ আইন ১৭৯৩ হিসেবে পরিচিত।
সনদ আইন ১৭৯৩ : ১৭৯৩ সালের সনদ আইনের মাধ্যমে পূর্বের সনদের মেয়াদ ২০ বছর বৃদ্ধি করা হয়। বোর্ড অব কন্টোলের সদস্যদের বেতন ভারতের রাজস্ব থেকে দেওয়া হয়। বোম্বে ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিকে সর্বাত্মক ক্ষমতা প্রদান করা হয় এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে কোম্পানির সদস্যদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। এটি ছিল পিটার ভারত শাসন আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ও নিশ্চিতের জন্য তৈরিকৃত বিধান।
উপসংহার : সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৭৯৩ সালের সনদ আইন ভারতে কোম্পানির আধিপত্য অনেকটা হ্রাস করেছিল। কারণ ব্রিটিশ সরকার সনদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে কোম্পানির ক্ষমতা হ্রাস করার চেষ্টা করে। এজন্য সনদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন ও প্রেসিডেন্সিগুলোকে ক্ষমতা দেওয়া হয়। যার ফলে কোম্পানির ব্যবসা বাণিজ্যের বিস্তৃতি হ্রাস পায় ৷