ভূমিকা : অতি সুপ্রাচীন থেকেই পশ্চিম এশিয়া সমগ্র বিশ্বের ভূরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। · বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে এটি সর্বাধিক সমাদৃত। এটি বর্তমানে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ১৯০০ সালের দিকে এখানে তেলক্ষেত্র আবিষ্কার শুরু হলে সমগ্র বিশ্ব পরাশক্তির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে পশ্চিম এশিয়া। নিম্নে প্রশ্নালোকে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের পরিচয় বর্ণনা করা হলো :
১. পশ্চিম এশিয়া : সাধারণত পশ্চিম এশিয়া বলতে এশিয়া মহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলকে বুঝানো হয়ে থাকে। পূর্বে অঞ্চলটি | নিকটপ্রাচ্য নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সামরিক প্রয়োজনে এই সমগ্র অঞ্চলটিকে একত্রে মধ্যপ্রাচ্য বলে। অভিহিত করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালের ঐতিহাসিকগণ | মধ্যপ্রাচ্যকে পশ্চিম এশিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
2.ভৌগোলিক অবস্থান : পশ্চিম এশিয়া ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম ইউরোপের দক্ষিণে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি ৭টি সাগর দ্বারা আবৃত হয়ে আছে। সাগরগুলো হলো ইজিয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগর, পারস্য আরব, ভূমধ্যসাগর, কাস্পিয়ান ও লোহিত সাগর। এর উত্তর দিকে ককেশাস পবর্তমালা একে ইউরোপ থেকে পৃথক করেছে এবং একই সাথে তা মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে।
৩. দেশসমূহ : পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল এশিয়ার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৩টি দেশসহ মোট ১৮টি দেশ আছে। দেশগুলো হলো- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, ইরান, ইরাক, ইসরাইল, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া, ওমান, সৌদিআরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ।
৪. অর্থনৈতিক অবস্থান : অর্থনৈতিক দিক থেকে পশ্চিম ব এশিয়া বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তিই হলো খনিজ তেল। বর্তমান বিশ্বের মোট মজুত তেলের প্রায় ৬০% খনিজ তেলই উক্ত অঞ্চলে মজুতকৃত আছে। এছাড়া কৃষ্ণ সাগর, আরব পারস্য, লোহিত ও ভূমধ্যসাগরের অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলের সমুদ্র বাণিজ্যের সিংহাভাগই নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো।
৫. ধর্মীয় অবস্থান : হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে ইসলাম আরবে প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকেই দ্রুত এই অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটতে থাকে। পরে উমাইয়া, আব্বাসীয় ও সেলজুক সালতানাতের সময় তা আরো বিস্তৃত হয়। ১২৮৮ সালে উসমানীয় সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হলে সমগ্র পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে ইসলামের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬. পশ্চিম এশিয়ার ভূপ্রকৃতি : পশ্চিম এশিয়ার ভূপ্রকৃতি সাধারণত উষ্ণ। এই অঞ্চলে উর্বর, অনুর্বর, সমতল, পাহাড়- পর্বত, তৃণভূমি, নদী-নালা সমুদ্র সবরকম ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পশ্চিম এশিয়ার বিখ্যাত মরুভূমি দাস্ত-ই-বাড়ির এবং দাস্ত-ই লুট ইরানে অবস্থিত। ইতিহাস প্রসিদ্ধ ট্রাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস এই অঞ্চলে প্রবাহমান। পশ্চিম এশিয়ার পর্বতগুলোর মধ্যে তাওরাস আরাফাত জাগরত পর্বত অন্যতম।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সভ্যতার কেন্দ্রভূমি হিসেবে পশ্চিম এশিয়া বিশ্ববাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থলে ছিল। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সালতানাতের বিভক্তির মাধ্যমে এখানে অনেকগুলো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। আর ১৯ শতকের প্রারম্ভিকে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে বিপুল খনিজ তেলের ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ায় এই অঞ্চলটি বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।