ভূমিকা : ১৭৭৩ সালে বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ও দায়িত্বকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রণীত আইনকেই রেগুলেটিং অ্যাক্ট বলে। বাংলা জয়ের পূর্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাভবান ছিল কিন্তু জয়ের পর লোকসান কোম্পানি খেতে থাকে। এমতাবস্থায় কোম্পানির শাসনকে নতুন
করে সাজানোর জন্য রেগুলেটিং অ্যাক্টের প্রণয়ন হয় ।
→ রেগুলেটিং এ্যাক্ট প্রবর্তনের কারণ : রেগুলেটিং অ্যাক্ট প্রবর্তনের কারণগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা প্রচলন : বাংলা জয়ের পর থেকে কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে নিম্নপদস্থ কর্মচারী পর্যন্ত সকলেই নিজে লাভবান হবার তাগিদে চরমভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। যাতে করে কোম্পানি চরম লোকসান খায়। যার থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য এ আইন পাস হয় ।
২. কোম্পানির উপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাধান্য বৃদ্ধি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্বাধীনভাবে ভারতে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতো। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য এ আইন পাস করা হয়।
৩. স্বেচ্ছাচারী কর্মচারীদের বরখাস্ত : দ্বৈত শাসন প্রবর্তনের ফলে বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যেটা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এটার জন্য ব্রিটিশ সরকার কোম্পানির কর্মচারীদের বল্গাহীন ও অরাধ শোষণকে দায়ী করে। ফলে এ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বরখাস্ত করার জন্য এ আইন পাস করা হয়।
৪. কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালকদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করা : বাংলা জয়ের পর থেকে কোম্পানির শাসনের রূপরেখা পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলী ও অংশীদারদের মাঝে ভালো সম্পর্ক যাচ্ছিল না। এ সম্পর্ক উন্নতির জন্য এ আইন পাস করা আবশ্যক হয়ে ওঠে।
৫. বোম্বে ও মাদ্রাজ কুঠির সঙ্গে বাংলার সম্পর্কের উন্নয়ন : বোম্বে ও মাদ্রাজ কুঠি বাংলা কোম্পানি শাসনের অধীনে আসার পূর্বে স্ব-পরিষদ ছিল। এই দুই পরিষদের সাথে বাংলার সম্পর্ক উন্নয়নও এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও ভারতের প্রতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করার লক্ষ্যেই ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট প্রণীত হয় ।