ভূমিকা : চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন হলো ব্রিটিশ সরকারের সাথে কোম্পানির চুক্তি। কোম্পানি কর্মচারীদের দুর্নীতি | অভিযোগের প্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম ১৭৯৩ সালে সনদ আইন পাস | হয়। ১৭৯৩ সালের সনদ আইনের ২০ বছর পূর্ত হলে ১৮১৩ | সনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পুনরায় সনদ আইনের দাবি উঠে। ফলে ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ২য় সনদ আইন পাস হয়।
→ ১৮১৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ/ বৈশিষ্ট্যাবলি : ১৮১৩ সালের ধারা বা বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
১. উন্মুক্ত বাণিজ্যের অনুমোদন : ১৮১৩ সালের আইনে বিি ইংল্যান্ডের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জন্যও উপমহাদেশে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ করে দেয়। ইতোপূর্বে এখানে কোম্পানি | ধর্ম একচেটিয়াভাবে বাণিজ্য করতো। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও স ছিল । যেমন- চা বাণিজ্যে কোম্পানির একক আধিপত্য করতো।
২. মিশনারী কার্যক্রমের অনুমোদন : ১৮১৩ সনের সনদ আইনে ভারতীয় উপমহাদেশে মিশনারীদের আগমন অনুমোদন দেয় এবং একই সাথে এখানে মিশনারী কার্যক্রমের অনুমতি দেয়। এর ফলে খ্রিস্টান মিশনারীরা উপমহাদেশে ব্যাপকহারে 4. আগমন করে এবং এখান খ্রিস্টধর্মের প্রচার কাজ করে।
৩. কোম্পানির রাজস্ব ব্যবহার নীতি : এ সনদে ভারত থেকে সংগৃহীত রাজস্ব কোন খাতে কীভাবে ব্যবহার করবে তা উল্লেখ করা আছে। এ রাজস্ব থেকে সেনাবাহিনীর ভরণপোষণ, কোম্পানির ঋণবাবদ সুদ পরিশোধ এবং ভারতীয় কোম্পানির সমস্ত বেসামরিক ও বাণিজ্যিক ব্যয় নির্বাহের খরচ বহন করবে।
৪. গভর্নর জেনারেল ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা : এ আইনে গভর্নর জেনারেল ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়। কোনো ব্যক্তিকে লাইসেন্স দেয়া এবং বাতিল করার ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেল ও স্থানীয় সরকারের অবাধ হস্তক্ষেপের ক্ষমতা দেয়া হয় ।
৫. ভৌগোলিক বিবরণ সংরক্ষণ : এ অঞ্চলে অবাধে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুবিধার্থে কোম্পানিকে বাণিজ্যিক ও ভূখণ্ডগত বিবরণ আলাদাভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয় ৷
৬. বোর্ড অব কন্ট্রোলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা : এ আইনে প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতাকেন্দ্রিক প্রেসিডেন্সিগুলোতে Board of Control-এর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ।
৭. Justice of peace নিয়োগ : এ আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো Justice of peace নিয়োগ । ভারতে কোনো ব্রিটিশ কর্মচারী যদি অপরাধ করে তার বিচারের জন্য ব্রিটেনে আলাদা আদালত স্থাপন করা হয় এবং সেখানে তাদের বিচার হয় ।
৮. সামরিক বিষয়াবলি সম্পর্কে ধারা : ১৮১৩ সালের সনদে সামরিক বিষয়াবলির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করা হয়। এই সনদে কোম্পানি ও ভারতীয় প্রশাসনের সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ প্রণয়ন বিশেষ নিয়মকানুন প্রণীত হয়। যা কোম্পানির পরিচালনাকে নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে ।
৯. স্থানীয় সরকারের করারোপের নির্দেশ : ১৮১৩ সালের আইন স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় কর ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা প্রদান করেন। তাদের রাজস্ব ও অর্থবিষয়ক তথ্য প্রেসিডেন্সিতে সার্বক্ষণিক প্রদানের কথা বলা হয়। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ খাতের কেন্দ্রে অবস্থান করে ।
১০. শিক্ষা বিস্তার : এই আইনে শিক্ষা বিস্তারের বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করা হয়। এক লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ।
১১. ধর্মীয় উন্নয়ন : এ আইনের দ্বারা ভারতে ইউরোপীয় ধর্মীয় দর্শন বিস্তারের পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ সময় বিভিন্ন প্রদেশে চার্চ ও বিশপ নিয়োগ ও তাদের উপযুক্ত বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের নিম্নস্তরের অনেক লোক খ্রিস্টীয় ধর্মে দীক্ষা লাভ করে ।
১২. কোম্পানির কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ : এ আইন কোম্পানির কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে । এই পদক্ষেপ কোম্পানির কর্মচারীদের দক্ষ ও নিপুণ করে গড়ে তোলে। কোম্পানির প্রশিক্ষণ ও সংগঠনের প্রভাবে দক্ষ এক শ্রেণির কর্মচারী গড়ে তোলে যারা ভারতীয় প্রশাসনে বিশেষ ভূমিকা বিস্তার করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং অ্যাক্ট ভারতে শাসনতান্ত্রিক সুশাসন এবং কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ২০ বছর সনদ প্রদানের কথা বলা হয়। আর ১৮১৩ সালের সনদ আইন প্রণয়ন ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানি ও ব্রিটিশ সরকারের কার্যপ্রণালি এই আইন দ্বারা গৃহীত হয় ।